গণসমাবেশ, কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী জনস্রোত
জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্যরা। বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ এ পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার সাথে সুর মেলান সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। গতকাল শনিবার রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ তারা এ ঘোষণা দেন। সিরাজ বলেন, আমি নির্বাচিত সংসদ সদস্য, কিন্তু অনির্বাচিত সংসদ। সাড়ে তিন বছর এই সংসদে ছিলাম। এই সংসদে জনগণের কোনো কথা আওয়ামী লীগ বলে না। আওয়ামী লীগ এই সংসদকে বানিয়েছে বন্দনার বাক্স। যেখানে শেখ হাসিনার বন্দনা ছাড়া আর কোনো বন্দনা চলে না। তিনি বলেন, বর্তমান সংসদ জনগণের সংসদ নয়। যে কারণে আজ লাখ লাখ জনতা জড়ো হয়েছে। এই সংসদকে জনতার সংসদ বানাতে হবে। এই সংসদ আসতে হবে জনগণের অধিকার নিয়ে। জনগণের ভোটে নির্বাচিতরা আসবেন এই সংসদে।
তিনি অরো জানান, ‘আমরা সাতজন সংসদ সদস্য এই সংসদে আছি। আমাদের স্থায়ী কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এই বিশাল জনসমুদ্রকে সাক্ষী রেখে আমরা সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করলাম’। সমাবেশের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান ও সঞ্চালনায় রয়েছেন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনু।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় সমাবেশ। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। সমাবেশমঞ্চে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনুকুল হাসান শ্রাবণসহ আরও অনেকে উপস্থিত হয়েছেন। সঞ্চালনা করছেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল।
এদিকে ইতিমধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ গোলাপবাগ মাঠ। জনতার ঢল নেমেছে সড়কে। মাঠ পেরিয়ে কমলাপুর ও মুগদা সড়কে জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে। খ- খ- মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন নেতাকর্মীরা। ঢাকা বিভাগের পাশাপাশি সারা দেশ থেকে ব্যানার ও মিছিল নিয়ে এখনো আসছেন তারা। সাতক্ষীরা থেকে আসা সাবেক এমপি কাজী আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের দাবি আদায়ের জন্য সকাল থেকেই সমাবেশস্থলের পাশে মানিকনগর এলাকায় অবস্থান নিয়েছি। আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে ১০ হাজারের অধিক নেতাকর্মী ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। অংশ নিয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষরা। অনেকেই গতকাল রাতে গোলাপবাগ মাঠে রাত্রি যাপন করেছেন। এই স্বৈরাচার সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাব না। আমাদের আন্দোলন থামবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে। এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। ভোলার মনপুরা থেকে আসা আব্দুল মান্নান চেয়ারম্যান বলেন, ঢাকার সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা ডাক দিয়েছেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হয়েছি। আমরা এই সরকারের পতন চাই। দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।
কমলাপুর সড়কে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে বিক্ষোভ করেন অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন আহমেদ পিন্স। তিনি বলেন, এই অবৈধ সরকার গত ১৪টি বছর মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছেন। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছন। এই সরকারকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা অনতিবিলম্বে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।
দ্রব্যমূল্য, তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে বিএনপি সারা দেশে গণসমাবেশ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ঢাকায় গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। দলটি নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। তবে পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি।
এ নিয়ে প্রায় দুই সপ্তাহের উত্তেজনার পর গত শুক্রবার বিকেলে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি পায় দলটি। এর পর থেকেই সেখানে সমবেত হতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। এর আগে গত শুক্রবার রাজধানী গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশ আয়োজনের পুলিশি অনুমতি পাওয়ার পরই ভেন্যুতে আসতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। শুক্রবার বিকেল থেকেই দলটির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী গোলাপবাগ মাঠে জড়ো হতে থাকেন। রাত যত হয়েছে, মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীর উপস্থিতিও বেড়েছে। ওই সময় মাঠের ভেতর ও সড়কে খ- খ- হয়ে মিছিল করতে থাকেন নেতাকর্মীরা। বিএনপি নেতাকর্মীর ভিড়ে মাঠের পাশের সড়কগুলোতে যানজট সৃষ্টি হয়।