রংপুর সিটি করপোরেশনে অতি দরিদ্রদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ায় নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থা লাইট হাউসের সেবায় প্রশংসা এখন সবার মুখে। এধরণের সেবায় উপকৃত হচ্ছেন নগরীর দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ। এর ফলে খুশি নগরীর দরিদ্র জনগোষ্ঠির উপকারভোগী। সূত্রে জানা গেছে, রংপুর মহানগরীর অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারের আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রকল্প কাজ করছে। এতে পারিবারিক স্বাস্থ্য কার্ডের মাধ্যমে বিনা মূল্যে ১০টি সেবা দেওয়া হয়। রংপুর মহানগরীতে ২০১৪ থেকে চলমান এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০১৯ সালের আগস্টে দায়িত্ব পায় বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) লাইট হাউস। প্রতিষ্ঠানটি জরিপ চালিয়ে প্রায় ১১ হাজার পারিবারিক স্বাস্থ্য কার্ডের সেবার আওতায় আনার চেস্টা চালায় তবে জানা যায় করোনা মহামারীর কারনে এই বিতরন কার্যক্রম কিছটা বিঘ্ন হয় তবে এই কাজের ধারা বাহিকতা চলমান। বর্তমানে নগরীর সাতমাথায় নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অফিস স্থাপন করে পুরোদমে কার্যক্রম চালাচ্ছে লাইট হাউস। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগর ভবনে গর্ভবতী মা, কিশোরী, বয়স্ক মহিলা, শিশুরা ছাড়াও সাধারণ মানুষও এখন নিয়মিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। নগরবাসীর স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে গত ৪ বছরে বিভিন্ন রকম কার্যক্রম পরিচালনা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জরুরি রোগীদের দ্রুত সেবা প্রদানে নতুন অ্যাম্বুলেন্স সংযোজন করা ছাড়াও সাতমাথা, নিউ জুম্মাপাড়া, আশরতপুর, সম্মানীপুর এবং বর্ধিত অংশ গণেশপুরের ক্লাব মোরে স্থাপিত নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে বাড়ানো হয়েছে সেবার পরিধি। জানা গেছে, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে সেবার আলো সবার কাছে ছড়িয়ে দিতে লাইট হাউস পরিচালিত রংধনু চিহ্নিত নগর মাতৃসদন ও নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গর্ভকালীন সেবা, প্রসবকালীন সেবা (নরমাল ও সিজারিয়ান), প্রসব পরবর্তী সেবা, মাসিক নিয়ন্ত্রণ সেবা, গর্ভপাত পরবর্তী সেবা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টি সেবা, সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ রোগের চিকিৎসা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, রোগ নিরুপণ সেবা, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করে আসছে। শুধু তাই নয়, হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষজনকে স্বল্পমূল্যে এবং পারিবারিক স্বাস্খ্যসেবার কার্ডের (রেড কার্ডের) মাধ্যমে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবাও প্রদান করা হয়। লাইট হাউস আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভারী প্রকল্প,সূত্রে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের মাধ্যমে রংপুর সিটি এলাকার দরিদ্র এবং হতদরিদ্র মানুষের মাঝে স্বল্পমূল্যে এবং বিনামূল্যে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। লাইট হাউজ ১৬টি ওয়ার্ডে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর ২০১৯ সাল হতে এ পর্যন্ত ১৮৪,৭৩৮ জনের অধিক রোগীকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৯২ জনের নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারী করা হয়েছে। মোট রোগীর মধ্যে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর (লালকার্ডধারী) শতকরা হার ২৩% এবং চলতি বছর লালকার্ডধারী সেবাগ্রহীতার শতকরা হার ৩১% উন্নীত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পারিবারিক স্বাস্থ্য কার্ডধারীদের (লালকার্ডধারী), বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা ব্যবস্থাপত্র প্রদান, প্যাথলজিক্যাল সেবা, প্রয়োজনীয় ঔষধ বিতরণ, নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারী এবং এ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনের সহযোগীতায় নগর মাতৃ সদন কেন্দ্র হতে সরকারের বিশেষ কার্যক্রমের আওতায় ১৩৩,২৬৫ জনকে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন প্রদান করা হয়েছে। নগরীর আলম নগর এলাকার সেবাগ্রহীতা মেরিনা ও বিথী নামে দুই নারী বলেন, প্রতি সপ্তাহে এলাকার অনেকেই নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নেন। এর জন্য নামমাত্র মূল্য দিতে হয়। তবে যাদের রেড কার্ড রয়েছে তাদের কোনো টাকা দিতে হয় না। এই খানে প্যাথলজিক্যাল সেবাও দেওয়া হয় বলে জানান তারা। নগরীর সাতমাথা পাটবাড়ি এলাকার লিমা বেগম ও আলমনগর এলাকার নাজমা, মৌ, টুম্পা. তামান্না, জুই বলেন, তারা লাইট হাউজের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। এতে তারা খুশি। তাদের মত দরিদ্র ও নি¤œ আয়ের মানুষের স্বাস্থসেবায় আশার আলো ছড়াচ্ছে লাইট হাউস। রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বাস্থবায়নে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের লাইট হাউস কর্মী সার্ভিস প্রমোটর (এসপি) মাহাবুবা আকতার বলেন, আমরা দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছি। বিশেষ করে যারা একেবারেই স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে অসচেতন, তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি নগরবাসীর প্রত্যাশিত স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। প্রতিটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আমাদের অভিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে। এব্যাপারে লাইট হাউসের স্বাস্থ্য সেবা প্রকল্পের ম্যানেজার শামীম আহমেদ বলেন, অতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে‘৩৬টি স্যটেলাইট ক্লিনিকের মাথ্যমে আমাদের মাঠকর্মীরা নিরলস ভাবে কাজ করছে এবং চুক্তিবদ্ধ ওয়ার্ডের বাহিরে ও দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে কাজ করছি। তিনি আরো জানান লাইটের হাউসের কার্যক্রমে ব্যাপক সাড়াও পড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।