পরিবারের সচ্ছলতা ফিরে আনতে দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করেন নুর হোসাইন, ইয়াছিন আরাফাত, বাহার উদ্দিন ও রিজভি আহমেদ। তারা পরস্পর বন্ধু। এরই ধারাবাহিকতায় বলিভিয়া যাওয়ার জন্য ভিকটিম ইয়াছিন আরাফাতের মাধ্যমে তার বাবা আবদুল মালেক এবং বলিভিয়ায় অবস্থানরত সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আলোচনা করে টাকা-পয়সা লেনদেন করেন। লেনদেনের দুই মাস আগে সাইফুল ইসলাম কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বলিভিয়ার জাল ভিসা পাঠান এবং মালেক চার বন্ধুকে ভিসা বুঝিয়ে দেন। চার বন্ধু বলিভিয়ার জাল ভিসা সম্বলিত পাসপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে বলিভিয়া যাওয়ার পথে কাতার পৌঁছার পর তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। জাল ভিসা প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এ ঘটনায় ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিমানবন্দর থানায় সাইফুল ইসলাম ও আব্দুল মালেকের নামে মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেন পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ারুল হক ভুইয়া। একই বছরের ১১ অক্টোবর সাইফুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন উত্তরা পূর্ব থানার এসআই মেহেদী হাসান। তদন্তে আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়। ২০২২ সালের ১৮ অভিযোগ সাইফুলের বিরুদ্ধে গঠন করার মতো উপাদান না থাকায় মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেন ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল। বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন, আসামি সাইফুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর অধীন কোনো অভিযোগ সংঘটিত হয়নি। তার বিরুদ্ধে দ-বিধি বা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন ২০১৩ বা পাসপোর্ট আইনের অধীনে অপরাধ সংঘটিত হয়। আসামির বিরুদ্ধে দ-বিধি কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনের অধীনে অভিযোগপত্র নং-৪৯৫ ও ৪৯৫ (ক) দাখিল করা আছে। দুই আইনের অধীনে মামলা বিচারাধীন। উপরের সব আলোচনা থেকে ট্রাইব্যুনাল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো যে, আসামি আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর অধীনে অভিযোগ গঠনের উপাদান বিদ্যমান নেই। মানবপাচার মামলাগুলোর তদন্তে পুলিশকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। দায়সারা তদন্ত থেকে দূরে থাকতে হবে। সঠিক তদন্তে প্রকৃত অপরাধীরা চিহ্নিত হবে। প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতায় এলে অবশ্যই মানবপাচার অনেকটা কমে আসবে।
ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ঢাকার সবুজবাগের জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে ছয় লাখ টাকায় সাজিদ হোসেন (তোরা), শাহজাহান দেওয়ান ও আফরোজা বুলবুলের চুক্তি হয়। চুক্তির অংশ হিসেবে তিন লাখ টাকা নিয়ে জাহিদুলকে ২০১৯ সালের ২৫ মার্চ বিমানে কাতার পাঠান তারা। সেখানে পৌঁছার পর কোনো চাকরি না পেয়ে অতিকষ্টে দিন পার করতে থাকেন জাহিদুল। দুই মাসের মাথায় কাতার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। এরপর কাতার থেকে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর জাহিদুলের মা ঝর্ণা বেগম সবুজবাগ থানায় সাজিদ হোসেন (তোরা), শাহজাহান দেওয়ান ও আফরোজা বুলবুলের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেন। পরের বছরের ৩ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন সবুজবাগ থানার এসআই রবীন্দ্রনাথ সরকার। ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের উপাদান না থানায় মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেন মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল।
শুধু নুর হোসাইন বা জাহিদুল নন। এ ধরনের অনেক মামলায় অভিযোগ গঠন করার মতো উপাদান না থাকায় আসামিদের অব্যাহতি দেন ট্রাইব্যুনাল। ২০২০ সালের ৯ মার্চ ঢাকায় মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ১০২৬টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে খালাস পেয়েছেন ৯১২টি মামলার আসামি। অব্যাহতি পেয়েছেন ৮৩টি মামলার আসামি। আর সাজা হয়েছে ৩১টি মামলার আসামিদের। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঠিকভাবে তদন্ত না করে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জগঠনের মতো উপাদান না থাকায় আসামিদের খালাস প্রদান করেন ট্রাইব্যুনাল।
পুলিশ বলছে, তারা কঠিনভাবে মামলাগুলো তদন্ত করতে চায়। তদন্তের সময়সীমা থাকায় তারা সময়ের অভাবের অনেক সময় দুর্বল চার্জশিট দাখিল করেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৫৭৬টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে ১৪টি মামলায় সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ৫১৪ মামলার আসামিরা। ২০২১ সালের মোট ৪১৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি মামলায় সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ৩৬১ মামলার আসামিরা। ২০২০ সালের ১২ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালত ৩৭টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। নিষ্পত্তি হওয়া কোনো মামলায় সাজা হয়নি। বরং সবাই খালাস পেয়েছেন। অধিকাংশ মামলার অব্যাহতির আদেশে বিচারক উল্লেখ করেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর অধীনে অভিযোগ গঠনের উপাদান বিদ্যমান নেই। অভিযোগ গঠনের উপাদান না থানায় মামলার দায় হতে আসামিদের অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
অনুসন্ধানে আরও দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ৫১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ মামলায় খালাস, চার মামলায় অব্যাহতি ও তিন মামলায় সাজা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৫৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ মামলায় খালাস, ছয় মামলায় অব্যাহতি হয়েছে। মার্চ মাসে ৪৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ মামলায় খালাস, দুই মামলায় অব্যাহতি ও এক মামলায় সাজা হয়েছে। এপ্রিল মাসে ৪৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩ মামলায় খালাস, দুই মামলায় অব্যাহতি ও এক মামলায় সাজা হয়েছে। মে মাসে ৫০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ মামলায় খালাস, দুই মামলায় অব্যাহতি ও দুই মামলায় সাজা হয়েছে। জুনে মাসে ৬৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এরমধ্যে ৬০ মামলায় খালাস, চার মামলায় অব্যাহতি ও দুই মামলায় সাজা হয়েছে। জুলাই মাসে ২৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ মামলায় খালাস, দুই মামলায় অব্যাহতি হয়েছে। আগস্ট মাসে ৪৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ মামলায় খালাস, চার মামলায় অব্যাহতি হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ৬৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ মামলায় খালাস, চার মামলায় অব্যাহতি ও এক মামলায় সাজা হয়েছে। অক্টোবর মাসে ৩৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২৪ মামলায় খালাস, ৭ মামলায় অব্যাহতি ও দুই মামলায় সাজা হয়েছে। নভেম্বর মাসে ৯২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ৭৯ মামলার আসামি আর অব্যাহতি পেয়েছেন ১০ মামলার আসামি।
দুর্বল চার্জশিটের অন্যতম কারণ হচ্ছে মামলার ঘটনা দেশের বাইরে থাকে। সেখানে গিয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনা পান না। থানা পুলিশ বা তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তের বাইরে আরও অনেক কাজ থাকে। সে কারণে মানবপাচার মামলার তদন্তে এত বেশি সময় দিতে পারেন না। মামলার যে ডকুমেন্ট সেগুলোও আনা হয় না।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৫৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ মামলায় খালাস, ৯ মামলায় অব্যাহতি ও তিন মামলায় সাজা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৪৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬ মামলায় খালাস, সাত মামলায় অব্যাহতি ও তিন মামলায় সাজা হয়েছে। মার্চ মাসে ৫৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ মামলায় খালাস, এক মামলায় অব্যাহতি ও এক সাজা হয়েছে। এপ্রিল মাসে মাত্র একটা মামলায় নিষ্পত্তি হয়েছে। এ মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে। মে মাসে কোনো মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। জুনে নিষ্পত্তি হওয়া সাত মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে। জুলাই মাসে কোনো মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। আগস্টে নিষ্পত্তি হওয়া ১০ মামলায় খালাস দেওয়া হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ৭৪টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ মামলায় খালাস, চার মামলায় অব্যাহতি ও ছয় মামলায় সাজা হয়েছে। অক্টোবর মাসে ৫৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ মামলায় খালাস, চার মামলায় অব্যাহতি ও তিন মামলায় সাজা হয়েছে। নভেম্বর মাসে ৭৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ মামলায় খালাস, এক মামলায় অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর মাসে ৩২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ মামলায় খালাস, ছয় মামলায় অব্যাহতি ও এক মামলায় সাজা হয়েছে। ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির এক হিসাবে দেখা গেছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে মানবপাচারের ছয় হাজার ১৩৪টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ৩৩টি মামলায় ৫৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। ২০০ মামলায় আসামি খালাস পেয়েছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত বিচারাধীন ছিল বাকি পাঁচ হাজার ৯০১টি মামলা।
একটা মানবপাচার মামলার আসামি ২০ জন থাকলে সেখানে বিশ জেলার হয়ে থাকে। দালালরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিকটিমদের নিয়ে আসেন। দালালদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়া কষ্টসাধ্য। মামলা তদন্তের একটা সময়সীমা রয়েছে। সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিট দেওয়ার সময় পিপির মতামত নেওয়ার বিষয়টি- যারা পুরোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা তারা এ ভুলটা করেন না। হিসাব মতে, প্রায় ১৪ শতাংশ মামলায় আসামির সাজা হয়েছে। বাকি প্রায় ৮৬ শতাংশ বিচারে আসামি খালাস পেয়েছে।
ঢাকার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর) সাজ্জাদুল হক শিহাব বলেন, মানবপাচারের অনেক মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ঠিকভাবে তদন্ত না চার্জশিট দাখিল করেন। যাকে মামলার আসামি করার কথা না তাকে আসামি করা হচ্ছে। আবার যাকে আসামি করার কথা তাকে অব্যাহতির আবেদন করছে। তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা চার্জশিট দেওয়ায় আগে আমাদের মতামত নেয় না। অথচ আইনে বলা আছে, চার্জশিট দেওয়ার আগে পিপির অপিনিয়ন (মতামত) নিতে হবে। কিন্তু একটা মামলায়ও তারা আমাদের মতামত নেয়নি। তারা তাদের খেয়াল খুশিমতো আদালতে চার্জশিট দাখিল করছেন। তিনি আরও বলেন, অনেক পতিতালয়ের মামলায় ইদানীং আমাদের আদালতে চার্জশিট আসছে। আইনে বলা আছে, যারা পতিতালয়ের মালিক, পতিতালয় পরিচালনা করবে, যারা পতিতালয়ের মালিক তারা আসামি হবে। অথচ যারা পতিতালয়ে কাজ করনে তাদের এ মামলায় আসামি করা হচ্ছে। তারা হওয়ার কথা ছিল মামলার ভিকটিম। এজন্য এ মামলাগুলোয় আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। অনেকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে টাকা নেন। বিদেশে পাঠাতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করা হচ্ছে। অথচ টাকা নেওয়ার ঘটনায় অর্থ আত্মসাতের মামলা হওয়ার কথা।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, একটা মানবপাচার মামলার আসামি ২০ জন থাকলে সেখানে বিশ জেলার হয়ে থাকে। দালালরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিকটিমদের নিয়ে আসেন। দালালদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা পাওয়া কষ্টসাধ্য। মামলা তদন্তের একটা সময়সীমা রয়েছে। সময়ের বাধ্যবাধকতা থাকার কারণে তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলার চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিট দেওয়ার সময় পিপির মতামত নেওয়ার বিষয়টি- যারা পুরোনো তদন্তকারী কর্মকর্তা তারা এ ভুলটা করেন না। যারা নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা তারা না জেনে এ ভুলটি করেন। আবার অনেক সময় এমন হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা চার্জশিটের অপিনিয়ন নেওয়ার জন্য পিপি’র কাছে পাঠিয়ে দেন। পিপির পিছে দিনের পর দিন ঘুরেও যখন অপিনিয়ন দেয়নি তখন বাধ্য হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা চার্জশিট দাখিল করেন। সমন্বয়ের অভাবের কারণে অনেক সময় দুর্বল চার্জশিট দাখিল করা হয়। সব মামলায় দুর্বল চার্জশিট দাখিল করে না পুলিশ। পুলিশ কঠিনভাবে মামলার তদন্ত করতে চায়। মানবপাচার মামলা তদন্তে আমাদের যথেষ্ট সাকসেস রেট আছে। তদন্তে যেসব দুর্বলতা আছে ভবিষ্যতে সেটা আমরা পূরণ করার চেষ্টা করবো।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, দুর্বল চার্জশিটের অন্যতম কারণ হচ্ছে মামলার ঘটনা দেশের বাইরে থাকে। সেখানে গিয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনা পান না। থানা পুলিশ বা তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্তের বাইরে আরও অনেক কাজ থাকে। সে কারণে মানবপাচার মামলার তদন্তে এত বেশি সময় দিতে পারেন না। মামলার যে ডকুমেন্ট সেগুলোও আনা হয় না। এসব কারণে ৯০ দিনে মামলার তদন্ত শেষ করার কথা থাকলেও সেটা ছয় মাস বা এক বছরেও শেষ করতে পারেন না। মামলার তদন্ত ঠিকভাবে না হয়ে চার্জশিট দিলে পরবর্তী কার্যক্রমগুলোও ঠিকভাবে হয় না।
তিনি আরও বলেন, এ জন্য মানবপাচার মামলার অধিকাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়। মামলা প্রমাণ করতে ভালো চার্জশিট লাগবে। এছাড়া আমাদের পুলিশ, পিপি ও রাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয় হয় না। সবাই একসঙ্গে কাজ করলে মানবপাচার মামলার আসামিদের সাজা অবশ্যই হবে। প্রকৃত অপরাধীদের সাজা হলেই কমে আসবে মানবপাচার। আইনজীবী খালেদ হোসেন বলেন, মানবপাচার মামলাগুলোর তদন্তে পুলিশকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। দায়সারা তদন্ত থেকে দূরে থাকতে হবে। সঠিক তদন্তে প্রকৃত অপরাধীরা চিহ্নিত হবে। প্রকৃত অপরাধীরা আইনের আওতায় এলে অবশ্যই মানবপাচার অনেকটা কমে আসবে।-জাগোনিউজ২৪.কম