নীলফামারী জলঢাকায় মাঠে মাঠে হলুদ বরণ সরিষা ফুলে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। মাঠ জুড়ে চির সবুজের বুকে কাচা হলুদের রঙের উৎসব এনেছে। যা প্রকৃতিকে এনে দিয়েছে ভিন্ন রুপ। এ যেন প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে পুরো সরিষা ক্ষেত। রঙের এই মেলায় প্রকৃতি যেন নিজের খেলায় হাসছে। হলুদের এই চোখ জুড়ানো দৃশ্য দেখে যে কারো মন জুড়িয়ে যাবে। কাচা হলুদের ছন্দে হাসি ফুটেছে সরিষা চাষির মুখে। কম খরচ ও কম সময়ে বেশি ফলন ও ভালো দাম পাওয়ার আশায় জলঢাকা উপজেলার কৃষকেরা দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এ উপজেলায় তেমন একটা সরিষার চাষ না হলে গত বছরের তুলনায় এ বছর কম বেশি অনেক এলাকায় সরিষার চাষ লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিনে দৈনিক খবরপত্র তদন্তে কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরিষা মুলত বোনাস ফসল। বীজ বপনের পর থেকে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৮৫ দিনের মধ্যেই সরিষা ঘরে তোলা যায়। অল্প পরিমাণ ইউরিয়া ও টিএসপি ছাড়া অন্য কোনো সারের প্রয়োজন হয় না। চারা গজানোর পর আগাছা ছাড়া কোনো পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না। তাই সরিষা চাষে বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ১৬০০ থেকে ২১০০ টাকা খরচ হয় বলে জানান সরিষা চাষিরা। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষার ফলন হয় ৬-৭ মণ। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সে বিবেচনা করে কৃষকের লাভ থাকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তাই কম খরচ লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছে এ উপজেলার সরিষা চাষিরা। এছাড়াও সরিষা চাষীদের সাথে কথা বলে আরও জানা যায়। মাঠে যখন প্রচুর পরিমাণে সরিষা ফুল ফুটতে শুরু করে তখন মৌ চাষিরা তাদের মৌ বাক্স গুলো সরিষার ক্ষেতের পাশে স্থাপন করে। তারপর ফুল বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথেই মৌমাছিরা ওই এলাকা থেকে মধু সংগ্রহ করে তাদের মৌ বাক্সে জমা রাখে। এভাবেই তৈরি হয় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক সরিষা ফুলের খাঁটি মধু।উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী গত কয়েক বছর ধরে সরিষার চাষের পাশাপাশি মধু ও চাষ করছেন তারা। মধু চাষ বেশ লাভজনক একটি ব্যবসা। তাই সরিষার চাষের পাশাপাশি মধু চাষেও জোকছেন উপজেলার কৃষকেরা। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিধ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আহসান হাবীব এর সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার সদর উপজেলায় ৯৯২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বারি সারিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭ ও বিনা সরিষা-৯ উল্লেখ যোগ্য হারে চাষ হয়েছে। উল্লেখ্য যে উপজেলায় এবার যে সরিষা চাষ হয়েছে তার বেশিরভাগই সরকারি প্রণোদনার আওতায় ভুক্ত। সরকারিভাবে উপজেলায় প্রদর্শনী ও দেওয়া হয়েছে একশোরও অধিক লোকজনের মধ্যে।এদিকে উপজেলায় আবাদের আনুমানিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮০ মেট্রিক টন। এছাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন আহমেদ এর সাথে দৈনিক খবরপত্রের একান্ত সাক্ষাৎকার হলে তিনি জানান, জলঢাকা উপজেলায় সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।এবছর উপজেলায় ব্যাপক হারে সরিষার চাষ হয়েছে। এছারা সরিষার সঙ্গে মৌমাছির চাষ করে মধু সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করতে পারে এ জন্য উপজেলার গোলমুন্ডা, কাঠালী শিমুলবাড়ী, শৌলমারী, ডাউয়াবারী ও পৌরসভা সহ মোট ৬টি মৌ-বক্স প্রধান করা হয়েছে। সরিষাক্ষেতে মৌমাছি ফুলের ওপর বসলে পরাগায়ণে ফসল ভালো হয় এবং ১৫ থেকে ২০ ভাগ ফলন বেড়ে যায়। কৃষি অফিস থেকে মৌ খামারিদের সাথে ও সবসময় যোগাযোগ রাখছেন বলেও জানান তিনি।