ঝিনাইদহের মহেশপুরে করোতোয়া নদী থেকে খননযন্ত্র বসিয়ে বালি তুলে স্তুপ করা হচ্ছে। গত তিন সপ্তাহ নদীর মধ্যে মেশিন বসিয়ে এই বালি তুলছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাজহারুল হক স্বপন। যা নদীর কিছুটা দূরে স্তুপ করা হয়েছে। খননযন্ত্র বসিয়ে বালি উঠানোর কারনে নদী পাড়ের ভাঙ্গনের আশংকা করছেন স্থানীয়রা। যা চাষযোগ্য জমির ক্ষতি হবে বলে তারা মনে করছেন। অবশ্য চেয়ারম্যান মাজহারুল ইসলাম এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়নে এই বালি ব্যবহার হবে। যে কারনে বালি তুলছেন।
তাছাড়া যে স্থান থেকে বালি তুলছেন সেই স্থানের পাশের জমি তার। ফলে ভাঙ্গন হলে ক্ষতি তার হবে, অন্য কারো ক্ষতি হবে না বলে জানান। সরেজমিনে দেখা গেছে, মহেশপুর উপজেলার পশ্চিম-দক্ষিণ পাশ দিয়ে বয়ে গেছে করোতোয়া নদী। এই নদীর পান্তাপাড়া ইউনিয়নের হুদোপাড়া অংশে হুদোপাড়া গ্রামের মধ্যে একটি স্থানে খননযন্ত্র (ড্রেজার মেশিন) বসিয়ে বালি তোলা হচ্ছে। যে স্থান থেকে বালি তোলা হচ্ছে তার পশ্চিম পাশ দিয়ে চলে গেছে পান্তাপাড়া-শ্যামবাজার সড়ক। নদী থেকে তোলা বালি ওই সড়কের ধারে স্তুপ করা হচ্ছে। বুধবার বালির স্তুপে গিয়ে দেখা যায় সেখানে পাবনা এলাকার শ্রমিক আসাদুল ইসলাম কাজ করছেন। পাশে নদীর মধ্যে মেশিনের দায়িত্বে আছেন সোহেল হোসেন ও শাহিনুর রহমান নামের আরো দুই জন। আসাদুল ইসলাম জানান, চেয়ারম্যান তাদের চুক্তিতে এনেছেন। এখানে প্রায় ৩ সপ্তাহ হলো তারা বালি তুলছেন। এখন আর কতদিন উঠানো হবে তা তিনিই বলতে পারেন। স্থানীয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে জানান, খননযন্ত্র দিয়ে বালি উঠানোর কারনে তারা খুবই আতংকে আছেন। কখন পাড় ধসে পড়ে এই ভয় পাচ্ছেন। এভাবে বালি উঠানো কোনো ভাবেই ঠিক নয়, তারপরও উঠানো হচ্ছে। বালি উঠানোর সঙ্গে প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় তারা প্রতিবাদ করার সাহসও পাচ্ছেন না। এমনকি গোপনে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে এখন ভয়ে আছেন। তারা যে অভিযোগ করেছিলেন তার কোনো বিচার পাননি, উল্টো যারা অভিযোগ করেছেন তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের নানা ভায়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে বালি উঠানো বন্ধ হলে তাদের দেখে নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এলাকার উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের কথা বলে এই বালি তুলে মূলত ঠিকাদারের কাছে বিক্রি করা হবে। এখন স্তুপ করে রাখা হয়েছে। তার ভাষায় উন্নয়ন কাজে বালির প্রয়োজন হলে যেখানে বালুমহল আছে সেখান থেকে ক্রয় করতে হবে। যেখানে সেখানে মেশিন বসিয়ে মাটির তলদেশ থেকে বালি উঠানোর কোনো সুযোগ নেই। অপর এক বাসিন্দা জানান, সামান্য জায়গায় মেশিন বসিয়ে যে পরিমান বালি তুলেছেন তাতে অনুমান করা যায় কতটা গভির করা হয়েছে। মেশিনের সাহায্যে এই গভির থেকে গভিরতর করায় এলাকায় ভাঙ্গনের ঝুকি রয়েছে। তাৎক্ষনিক ভাবে ভাঙ্গন দেখা না গেলেও আস্তে আস্তে এর কুফল দেখা যাবে। যা পাশ^বর্তী জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। অবশ্য খননযন্ত্রের চালকগন জানিয়েছেন তারা ৭ থেকে ৮ ফুট গভির করছেন। এর বেশি গভিরে তারা যাচ্ছেন না।
এ বিষয়ে পান্তাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল হক স্বপন দাবি করেন, এই বালি উঠানোয় এলাকার কোনো ক্ষতি হবে না। ইউনিয়নে তার বিপক্ষে একটি পক্ষ রয়েছে, যারা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। যে স্থানে বালি উঠানো হচ্ছে সেই স্থানের পাশের জমি তার। ফলে ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখেই বালি উঠাচ্ছেন। আর বেশি উঠানো হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশী জানান, তিনি বিষয়টি অবগত নন। তবে এ জাতীয় ঘটনা থাকলে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।