পৌষের শেষে চলনবিল এলাকায় হাড় কাঁপানো শীতে স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ছন্দপতন ঘটতে শুরু করেছে। শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছড়িয়ে থাকা প্রায় নয় শতাধিক মুরগির খামারে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে খামারের মুরগি রক্ষার চেষ্টা করছেন খামারীরা। তীব্র শীতের প্রভাবে গত এক মাসের ব্যবধানে সকল হাট বাজারে খুচরা ও পাইকারিতে মুরগির দাম কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
তাড়াশ পৌর বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী মোল্লা জানান, শীতের তীব্রতা বাড়ার কারণে বেশির ভাগ মুরগির খামারে নতুন করে মুরগির বাচ্চা না উঠানোর কারণে আগামীতে দাম আরো বাড়তে পারে।
জানা গেছে, উপজেলায় মাঝারি, প্রান্তিক এবং ক্ষুদ্র খামারিদের বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত প্রায় নয় শতাধিক মুরগির খামার রয়েছে। এ সব খামারে মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণে সোনালী, লেয়ার, বয়লার, কক, পাকিস্তানি লেয়ার, টারকি ও দেশী জাতের মুরগি পালন ও পরিচর্যা করা হয়ে থাকে। গত তিন থেকে চার দিনে এ উপজেলায় দিন এবং রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এতে করে খোলা জায়গার খামারের মুরগি রাতে ও সকালের দিকে তাপমাত্রা অনেক কম পাচ্ছে। খোলা জায়গায় হওয়ায় এসব খামারে হিম শীতল বায়ু প্রভাব ফেলছে। ফলে স্বাভাবিক তাপমাত্রা আর আদ্রতার জন্য এসব খামারে অতিরিক্ত বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালাতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দেড় মাসের ব্যবধানে সকল হাট-বাজারে সব ধরণের মুরগির দাম বেড়ে গেছে। উপজেলার নওগাঁ, গুল্টা, রানীরহাট, কাটাগাড়ী, বিনসাড়াসহ বিভিন্ন হাট বাজারে বয়লার ১১০ টাকার স্থলে পাইকারি বাজারে ১৪০ টাকা ও খুচরা বাজারে ১৫০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালী ২০০ টাকার স্থলে পাইকারি বাজারে ২৩০ টাকা ও খুচরা বাজারে ২৫০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশী জাতের মুরগি পাইকারি বাজারে ৩৫০ টাকা ও খুচরা বাজারে ৪২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তাড়াশের পৌর এলাকার কোহিত মহল্লার খামারি মো: শামীম হোসেন জানান, এ এলাকায় বর্তমানে দিনের শেষ ভাগে ১৫ থেকে ১৭ ডিগ্রী ও রাতে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রী তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আর এ কারণে খামারের মুরগি বাঁচাতে ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রী কৃত্রিম তাপ মাত্রা রাখার জন্য মুরগির শেডে বা ঘরে বোল্ডার পদ্ধতি হিসেবে বেশির ভাগ খামারে বৈদ্যুতিক বাল্ব, হিটার, হারিকেন বাতি ব্যবহার করে কৃত্রিম উপায়ে তাপ বাড়িয়ে রাখা চেষ্টা করছেন খামারিরা।
উপজেলার পশ্চিম ওয়াবদা বাঁধ এলাকার খামারি আলআমিন আবির বলেন, শীতের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে মুরগির খামারগুলোতে আমাশয়, গামবোরু, রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমা, ব্রংকাইটিস, নেক্রোটিক, এন্টারাইাটস, নিউমোনিয়া ও রিও ভাইরাস আক্রান্ত হচ্ছে। এ কারণে খামারিদের শীত মৌসুমে খামারের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সার্বক্ষণিক উচ্চ মাত্রার বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি চালু রাখতে বর্ধিত বৈদ্যুতিক বিল ও মুরগির ঔষধ খরচ করতে হচ্ছে। এছাড়া বাজারে পোল্টি খাদ্যেও দাম বাড়ার কারণে মুরগি উৎপাদনে খরচও বেড়ে গেছে।
তাড়াশ উপজেলা প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের ভেটেনারি সার্জন ডা: মো: শরিফুল ইসলাম জানান, শীতের এ সময়ে খামারের মুরগি সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত প্রতিরোধক দেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি শীতের এ সময়ে মুরগির প্রতি অধিক যত্নবান হওয়ারও পরামর্শ দেন।