শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ধনবাড়ীতে আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্ত যুদ্ধ দিবস পালিত মাধবদীতে জ্যান্ত কই মাছ গলায় ঢুকে কৃষকের মৃত্যু বদলগাছীতে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী কালীগঞ্জে কৃষক মাঠ দিবস ও কারিগরি আলোচনা লতিফ মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে ভ্যানচালককে পুলিশি হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন বরিশালে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী মেলার উদ্বোধন হাতিয়ায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার ক্যাম্পাসে বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুর রহমান বেলায়েত স্মৃতি কর্ণার ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আমিরুল ইসলামের পক্ষে ছাত্রলীগের গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ

জেলেপাড়া এখন ব্যস্ত সৈকত

॥ জয়নুল আবেদীন ॥
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২৩

অমানুষ মানুষ হওয়ার খবর তেমন জানা না থাকলেও ‘অঘাট ঘাট’ হওয়ার খবর অজস্র। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। ১৯৭৮ সালে ঘটনাক্রমে পরিচয় হয়েছিল এই দ্বীপের সাথে। সর্বশেষ গিয়েছিলাম ২০০৯ সালে। উভয় অভিজ্ঞতার উপর, ‘সত্তরের কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন’ এবং ‘কালের কবলে সেন্টমার্টিন’ শিরোনামে দৈনিক নয়া দিগন্তে দুটি আর্টিক্যাল প্রকাশিত হয়েছিল। দুই আর্টিক্যাল পাঠ করলেই বোঝা যাবে, জেলে-জোলার সেন্টমার্টিন এখন হীরের টুকরা।
পাক-ভারতের ১১ বছর পর স্বাধীন হয়েছিল ‘জেলে-জোলার’ দেশ মালয়েশিয়া। ২০০২ সালে প্যাট্রোনাস টুইন টাওয়ার দেখতে গিয়েই বুঝতে পারি, এশিয়ার হীরের টুকরা মালয়েশিয়া। জলদস্যুদের অভয়ারণ্যসহ মনুষ্যবাসের অযোগ্য ছিল স্ক্যান্ডিনেভিয়াভুক্ত হিমম-ল এলাকা। এখন প্রতি বছর সুখী দেশের তালিকায় সবার আগে তারা। স্ক্যান্ডিনেভিয়াভুক্ত দেশই এখন ইউরোপের ‘হীরের টুকরা’।
লন্ডনের পূর্বদিকে ইংলিশ চ্যানেল এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। ইংলিশ চ্যানেল ও আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগ জলাশয়ের নামই রিভার থামস বা টেমস নদী। সর্পিলাকারের নদীর দু’কূলে লন্ডন সিটি। ইংলিশ চ্যানেলই টেমস নদীর মোহনা। মোহনায় ছিল অবহেলিত দরিদ্র জেলেদের বসতি, এলাকার নাম ঝড়ঁঃযবহফ-ড়হ-ঝবধ. সাউথেন্ড-অন-সি। যা এখন লন্ডনের ব্যস্ত সৈকতসহ হীরের টুকরা।
শ’ দুয়েক বছর আগে এখানে ছিল কাঠের ‘পিয়ার’। সামুদ্রিক জাহাজ থেকে মালামাল লোডিং-আনলোডিং করার জন্য একটি বেসরকারি কোম্পানি এটি নির্মাণ করেছিল। পিয়ারটি ছিল তিন ফুট চওড়া ২.১৬ কিলোমিটার (১.৩৪ মাইল) প্রসারিত ঘাট। পিয়ারটি ছিল তিন ফুট চওড়া ২.১৬ কিলোমিটার (১.৩৪ মাইল) লম্বা ঘাট। ১৭৯০-এর দশকে, সাউথেন্ড হাই স্ট্রিট হয়। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৮২৯ সালের মে মাসে রাজকীয় সম্মতির পর কাঠের পিয়ারের পরিবর্তে লোহার পিয়ার স্থাপনসহ জনসাধারণের জন্য উন্মক্ত করা হয়েছিল।
১৯ শতকে ব্রান্সউইকের প্রিন্সেস ক্যারোলিনের পরিদর্শনের পর সাউথেন্ডের ওপর সবার নজর পড়ে। যুক্তরাজ্যের প্রথম ইলেকট্রনিক টেলিফোন এক্সচেঞ্জগুলোর একটি এখানে। ফলে সাউথেন্ড অ্যাক্সেস ক্রেডিট কার্ডের হোম হিসেবে বিকাশ পায়। ১৯৬০-এর দশকের পরে, শহরের বেশির ভাগ বাণিজ্য ও খুচরা বিক্রেতার জন্য স্থানটির গুরুত্ব বৃদ্ধি ঘটে। ১৫ অক্টোবর ২০২১-এ, সাউথেন্ড ওয়েস্টের সংসদ সদস্য স্যার ডেভিড অ্যামেস একটি নির্বাচনী সভায় মারাত্মকভাবে ছুরিকাঘাত প্রাপ্ত হন। স্যার ডেভিড অ্যামেস শেষ দিন পর্যন্ত এ এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। ১৮ অক্টোবর ২০২১-এ, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ঘোষণা করেন যে, রাণী সাউথেন্ড-অন-সিকে অ্যামেসের স্মারক হিসেবে শহরের মর্যাদা দিতে সম্মত হয়েছেন। ১ মার্চ, সাউথেন্ড বোরো কাউন্সিলকে রাণীর কাছ থেকে লেটার পেটেন্ট পেশ করা হয়, চার্লস, প্রিন্স অব ওয়েলস, আনুষ্ঠানিকভাবে বোরো শহরের মর্যাদা প্রদান করেন। চেমসফোর্ডের পরে সাউথেন্ড অ্যাসেক্সের আনুষ্ঠানিক কাউন্টির দ্বিতীয় শহর হয়ে ওঠে।
শহর ঘোষণার আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও এসেছিলাম সাউথেন্ড অন সি সৈকতে। সমুদ্র কুয়াশার চাদরে ঢাকা। মাঝে মাঝে দু-একটা স্থবির জলযান। নেই কোনো দোকানপাটও। শিশুদের বিনোদনের কিছু রাইড মড়ার মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। শিশুসহ লোকজন নেই রাইডেও। এক কথায় ঝড়ঁঃযবহফ-ড়হ-ঝবধ শীতকালে এক বিরানভূমি। জানা যায়, শীতকালে কেউ এখানে আসে না।
১৪ এপ্রিল ১০২২ ভিন্ন চিত্র। লন্ডন থেকে দূরপাল্লার পথ। যাওয়ার পথে বামদিকে সাউথেন্ড এয়ারপোর্ট, সাউথেন্ড ভিক্টোরিয়া, অ্যাডভেঞ্চার আইল্যান্ড এবং ডানদিকে সাউথেন্ড ইউনিভার্সিটি ও হাসপাতাল। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই সৈকতের কাছাকাছি পৌঁছে যাই। কয়েকটা কার পার্কিং এলাকা। একেকটা পার্কিংয়ে কয়েক শ’ গাড়ি। তারপরেও পার্কিংয়ের স্থান খালি নেই। আমাদের নামিয়ে দিয়ে পার্কিংয়ের সন্ধানে হেনা গাড়ি নিয়ে সমুদ্র পাড়ের রাস্তা ধরে চলে যায় দক্ষিণ দিকে। মিনিট চল্লিশেক পর হেনা এসে বলে-২০১৩ সালের শীতকালে এখানে এসেছিলাম। পার্কিং-এ গাড়ি থাকা দূরের কথা, একজন মানুষও ছিল না। আর আজ গাড়ি রাখার জন্য কোনো পার্কিং পাচ্ছি না। আধা মাইল দূরে রাস্তার পাশে গাড়ি রেখে এসেছি। কিছুক্ষণ পর গিয়ে নিয়ে আসতে হবে।’ সৈকতের প্রধান আকর্ষণ পিয়ার। সাউথেন্ড পিয়ার সম্পর্কে যা জানতে পারি তার সংক্ষিপ্ত নি¤œরূপ। ‘সাউথেন্ড পিয়ার শহরের ঐতিহাসিক আইকন এবং সেই সাথে বিশ্বের দীর্ঘতম আনন্দ পিয়ার। এটি ১.৩৩ মাইল পর্যন্ত প্রসারিত। কেউ ইচ্ছে করলে এই জায়গাটুকু হেঁটেও আসা-যাওয়া করতে পারে। পিয়ার ট্রেনের গেট প্রতি প্রান্তে ৩০ মিনিট খোলা থাকে। এই সময়ের মধ্যে যাত্রী ওঠানামা শেষ করতে হয়। যাত্রী ওঠানামা শেষ হলেই চলতে থাকে ট্রেন। এক ঘণ্টার মতো সময়ের মধ্যে আসা-যাওয়া। পিয়ারের মাথা বা হেডে অবতরণ করে সময় কাটানো যায়। যেখান থেকে পিয়ার ব্যাক করে সে জায়গাটির নামই পিয়ার হেড। পিয়ার হেডে দাঁড়িয়ে সৈকতের সৌন্দর্য, সাগরের দৃশ্য দর্শনসহ মাছ ধরতে পারেন। ম্যাকেরেল, প্লেস বা ফ্লাউন্ডারসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। ভাগ্য প্রসন্ন হলে ধরা পড়তে পারে নিজের ওজনের চেয়ে বড় ওজনের মাছও। ছিপ দিয়ে মাছ ধরার জন্য আলাদা টিকিট কিনতে হয়। শুধু ছিপ এবং টোপ সাথে রাখতে হবে। বড়শি ফেলে মাছ ধরছে কেউ কেউ। আমরা থাকতে থাকতেই কয়েকটা মাছ ধরতে দেখলাম। মাছগুলো রুই মাছের বাচ্চার মতো দেখতে হলেও আসলে রুই মাছের বাচ্চা নয়। আমারও ইচ্ছে করছিল ছিপ দিয়ে মাছ ধরার জন্য। ইচ্ছে করলেই হবে না। আলাদা টিকিটসহ অনুমতি নিতে হয়। পাশেই ঋওঝঐ ্ ঈঐওচঝ রেট লেখা রয়েছে। সাগরের তীরে নানা প্রকারের খেলনাসহ রাইড। ভিড় করে লাইন ধরে রাইডে চড়ছে শিশু-কিশোর। আছে জাদুঘর, অ্যাডভেঞ্চার আইল্যান্ড হল, ফেয়ারগ্রাউন্ড রাইড, ওয়াটার স্লাইডসহ বিনোদন পার্ক, তালজা আর্কেড এবং ভিক্টোরিয়া মার্কেট (যা এখন দ্য ভিক্টোরিয়া শপিং সেন্টার নামে পরিচিত)। প্রায় ৬.৪ ৬.৪ মিলিয়ন পর্যটক প্রতি বছর সাউথেন্ডে ভিজিট করেন- যার থেকে বার্ষিক ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের (আনুমানিক) রাজস্ব আসে। খাবারের মধ্যে সৈকতের প্রধান আকর্ষণ ভাজা মাছ। চেন্নাইর মেরিনা বিচ, কক্সবাজারে, কুয়াকাটা ভাজামাছ থাকবেই। মালয়েশিয়া কুয়ালালামপুরের কাছেই এক সৈকতে গিয়েছিলাম। প্রধান আকর্ষণ ডাব। এক রিংগিত করে এক ডাবে পানাহার দুই-ই শেষ। শত প্রকারের ভাজা মাছের মধ্যে অচেনা মাছ নিয়ে গাড়িতে চলে যাই। পরিশেষে বুঝতে পারি, রিসোর্ট সৈকত যতই দেখি, মন ভরে না আধা কানায় কানায় মন ভরে যায় কক্সবাজার রূপচাঁদা। লেখক : আইনজীবী ও কথাসাহিত্যিক
ঊ-সধরষ: E-mail: adv.zainulabedin@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com