প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করা না হলে রক্তপাতের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। শনিবার ওহাইওতে এক নির্বাচনী র্যালিতে তিনি আগামী ৫ই নভেম্বরের নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে অভিহিত করেন। এদিন তিনি হোয়াইট হাউজের প্রতিযোগিতাকে দেশের জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
রিপাবলিকান দল থেকে প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার ছাড়পত্র নিশ্চিত করার কয়েকদিন পরেই তিনি রক্তপাতের সতর্কতা দিলেন। তবে এর মধ্য দিয়ে তিনি আসলে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা পরিষ্কার করেননি। যুক্তরাষ্ট্রের অটো শিল্পের ঝুঁকি নিয়ে মন্তব্যের মাঝখানে তিনি এই মন্তব্য করেন। ওহাইওর ভান্দালিয়ার র্যালিতে ট্রাম্প বলেন, ৫ই নভেম্বর আমি মনে করি আমাদের দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন হতে চলেছে। এদিন তিনি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সবচেয়ে ‘খারাপ’ প্রেসিডেন্ট আখ্যায়িত করে তার সমালোচনা করেন।
মেক্সিকোতে গাড়ি তৈরির পরিকল্পনাকে চীনা পরিকল্পনা বলে এর সমালোচনা করেন। বলেন, তারপর ওই গাড়ি বিক্রি করা হবে মার্কিনিদের কাছেই। তার ভাষায়, আমি নির্বাচিত হলে এসব গাড়ি বিক্রি করতে পারবে না।
আমি যদি নির্বাচিত না হই, তাহলে এটা হবে পুরো দেশের জন্য রক্তস্নান, দেশের জন্য রক্তস্নান। ন্যূনতম তা-ই ঘটবে। তারা এসব গাড়ি বিক্রি করতে পারবে না।
ট্রাম্পের এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রচারণা শিবির ২০২০ সালে ব্যালট বাক্সে রিপাবলিকান ট্রাম্পকে ‘পরাজিত’ বলে অভিহিত করে বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই নির্বাচনের পর তিনি রাজনৈতিক সহিংসতার হুমকি দ্বিগুণ করেছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, তিনি (২০২১ সালের মতো) আরও একটি ৬ই জানুয়ারি চান। কিন্তু নভেম্বরের নির্বাচনে মার্কিন জনগণ তাকে আরও একটি নির্বাচনী পরাজয় উপহার দিতে যাচ্ছেন। কারণ, মার্কিন জনগণ অব্যাহতভাবে উগ্রপন্থাকে প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্প সহিংসতায় আসক্ত। তিনি প্রতিশোধ নেয়ার নেশায় আছেন।
এ মাসের শুরুতে ট্রাম্প এবং জো বাইডেন দু’জনেই আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করেন। দু’জনেই এ জন্য পর্যাপ্ত ডেলিগেট পেয়েছেন। ফলে ৫ই নভেম্বরে আবারও অন্যতম গণতান্ত্রিক লড়াই দেখতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিবাসন বিষয় যে নীতি গ্রহণ করেছেন তাকে ট্রাম্প ‘হরর শো’ বলে আখ্যায়িত করে তা সংস্কারের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, অভিবাসন বিষয়ক বিল কংগ্রেসে আটকে দেয়ার ক্ষেত্রে রিপাবলিকানরা চাপ প্রয়োগ করে সফলও হয়েছে। শনিবারের র্যালিতে সীমান্ত নিরাপত্তার বিষয়টি আরও একবার তুলে ধরেন ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি ওইসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করেছেন, যারা ডেমোক্রেটদের ভোট দিয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, লাখ লাখ অভিবাসীকে কাজের অনুমতি দেয়ার মাধ্যমে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন ভোটারদের পশ্চাৎ থেকে বার বার শুধু আঘাত করেছেন বাইডেন। এর ফলে তারা এবং হিস্প্যানিক মার্কিনিরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ভুগছেন। দশকের পর দশক ধরে ওহাইও রাজ্যকে ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার সময় থেকেই তারা রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে। ওদিকে ট্রাম্পের সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বলেছেন, তিনি নির্বাচনে সুস্থ বিবেকে ট্রাম্পকে সমর্থন দেবেন না। এমনকি বাইডেনকেও ভোট দেবেন না। তার এমন মন্তব্যের একদিন পরই ট্রাম্প ওই বক্তব্য দিয়েছেন।