বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

বরিশালে ১৭টি পয়েন্টে ওদের বিট বাণিজ্য!

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২১

বরিশাল নগরবাসীর গলার কাটা হয়ে আছে সড়কে চলাচলরত হলুদ অটো রিক্সা (ইজি বাইক)। বেপরোয়া এই অবৈধ ইজি বাইকের কারণে সৃষ্ট যান-জট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। এমনকি যান-জটে বিব্রত খোদ সিটি মেয়রও জানিয়ে দিয়েছেন এর দায়ভার না নেয়ার কথা। ঠিক সেই মুহুর্তে নগরীর ১৪টি পয়েন্ট থেকে বিট দিয়ে চলছে টোকেন বিহিন অবৈধ অটোরিক্সা। যা নিয়ন্ত্রণ করছে শ্রমিক নেতা নামধারী ১৫ জন ব্যক্তি। তবে নগরীর বেশ কিছু পয়েন্টে নামমাত্র অভিযান চালিয়েছে বরিশাল ট্রাফিক পুলিশ। তাদের কিছু কিছু পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করলেও ১০টি পয়েন্টে তেমন কোন অভিযান বা অবৈধ অটোরিক্সা আটক নেই বল্লেই চলে। সূত্রে জানাগেছে সাবেক মেয়র কামাল ২ হাজার ৬১০টি অটোরিক্সার লাইসেন্স (টোকেন) প্রদান করে সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন লাইসেন্স শাখা থেকে। বর্তমানে টোকেনধারী ও টোকেন বিহিন অটোরিক্সার সংখ্যা ৭হাজারের বেশি বলে দাবি করেন ট্রাফিক বিভাগ। আর এসব অবৈধ অটোরিক্সার মধ্যে কিছু সংখ্যক অটো আসছে নগরীর বাইরে থেকে। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, নগরীর মূল শহরের শেষ ভাগে ১৬টি পয়েন্ট থেকে অবৈধভাবে চলাচল করছে টোকেন বিহিন অটোরিক্সা। যা নিয়ন্ত্রণ করছেন শ্রমিক নামধারী ১৭ জন ব্যক্তি। মাসের শুরুতে স্থান ভেদে টোকেন বাবদ ১৫শ থেকে ১২শ টাকা করে আদায় করছেন শ্রমিক নামধারী নেতারা। অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নগরীর বেলতলা খেয়াঘাট থেকে লঞ্চ রুটে টোকেন বিহিন পর্যন্ত অন্তত ১০০ অবৈধ অটোরিক্সা চলছে। যা নিয়ন্ত্রণ করছে পলাশপুরের লাবলু। সিএনবি ১নং পোল থেকে ঠাকুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪০টির অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে ১হাজার টাকা করে প্রায় ৪০হাজার টাকা চাঁদা উঠায় ২৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি দাবীদার সোহেল বিশ্বাস। জিয়া সড়ক নথুল্লাবাদ পোল থেকে লোহার পোল পর্যন্ত প্রায় ৩০টি অটোরিক্সা চলাচল করে। এই স্থান থেকে প্রতি মাসে ৩২হাজার টাকা চাঁদা উঠায় কথিত শ্রমিকলীগ নেতা কবির কবির। হাতেমআলী কলেজ চৌমাথা থেকে টিয়াখালী পর্যন্ত ৭০টি অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে ১২শ টাকা করে প্রায় ৭৫হাজার টাকা চাঁদা উঠায় শ্রমিকলীগ নেতা দাবীদার রয়েল ওরফে টাক রয়েল ও আফজাল মজুমদার। সায়েস্তাবাদ থেকে তালতলী পর্যন্ত প্রায় ৪৫টি অটোরিক্সা চলাচল করে। এই লাইন থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৫০হাজার টাকা চাঁদা উঠায় শহিদুল ইসলাম। ধানগবেষনা রোড থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত ৬৫টি অটোরিক্সা চলাচল করে। প্রতিটি গাড়ি থেকে ২৪নং ওয়ার্ডে আ‘লীগের এক নেতা ১২শ টাকা করে প্রায় ৭০ হাজার টাকা চাঁদা উঠায়। কাশিপুর বাজার থেকে বারৈজ্যার হাট-রায়াপুর পর্যন্ত ৬৫টি অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে ১২শ টাকা করে প্রায় ৭০হাজার টাকা চাঁদা উঠায় বাজার কমিটির সভাপতি কবির ,মুন্না ও রিপন ওরফে অটো রিপন। মড়কখোলার পোল থেকে লাকুটিয়া সড়কে প্রায় ১৪০টি অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে ১৫শ টাকা করে প্রায় ২লক্ষ ১০হাজার টাকা চাঁদা উঠায় স্থানীয় যুবলীগ দাবীদার তারেক, মোখলেছুর রহমান ও শাহজাহান সহ সহযোগীরা। কালিজিরা বাজার থেকে ২৫টি অটোরিক্সা থেকে ১২শ টাকা করে প্রায় ২৭হাজার টাকা চাঁদা উঠায় সুমন সিকদার নামে এক ব্যক্তি। রুপাতলী থেকে প্রায় ২৭টি অটোরিক্সা থেকে জামাল গাজী ও লেদু সিকদার প্রতিমাসে ২২হাজার টাকা চাঁদা উঠায়। দপদপিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর সামনে থেকে দিনারের পোল ও চৌমাথা পর্যন্ত ৬৫টি অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে শ্রমিকলীগ নেতা পরিমল বাবুর নামে প্রায় প্রতিমাসে ৭৫হাজার টাকা চাঁদ উঠায়া কথিত আ’লীগ নেতা নেতা মঈদুল মুন্সি ও শংকর। সোনামিয়ার পোল থেকে প্রায় ৪০টি অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৪৫হাজার টাকা চাঁদা উঠায় হাবুল ওরফে অটো হাবুল। সাগরদী বাজার থেকে কারিকর ব্রিড়ি ব্রাঞ্চ হয়ে টিয়াখালী পুল পর্যন্ত প্রায় ৩০টি অটোরিক্সা চলাচল করে। এই লাইন থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় সুমন ওরফে অটো সুমন। একাধীক অটোচালকরা জানান, প্রতিমাসে প্রতিটি লাইনে টাকা দিয়ে গাড়ি রাস্তায় চালাতে হয়। টাকা দিলে গাড়ি চলে, না দিলে তাদের নির্যাতন ও মারধরের শিকার হতে হয়। তাছাড়া একটি সূত্র জানান, গত কয়েক দিন পূর্বে বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগ থেকে সড়কে অভিযান চালিয়ে অবৈধ গাড়ি আটক করেন। পরে অটো থেকে চাঁদাবাজী করার দায়ে ৯জনকে আসামী করে মামলা করা হয় কোতয়ালী থানায়। কিন্তু অটো শ্রমিক সংগঠন চাঁদাবাজী বন্ধ করলেও থেমে নেই বাকি ১০টি পয়েন্ট। আর এসব পয়েন্টে ট্রাফিক বিভাগের নেই কোন অভিযান। সূত্র জানান,বরিশাল নগরীতে ধানগবেষনা থেকে সাবেক খেয়াঘাট, সাগরদী বাজার থেকে কারিকর ব্রিড়ি ব্রাঞ্চ হয়ে টিয়াখালী পুল পর্যন্ত , বাস টার্মিনালে ট্রাফিক বক্স সংলগ্ন গোল চত্ত্বর থেকে সাবেক দপদপিয়া ফেরীঘাট, রূপাতলীর একই স্থান হতে কালিজিরা বাজার পর্যন্ত , দপদপিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর সামনে থেকে দিনারের পোল ও চৌমাথা, কাশিপুর বাজার থেকে বারৈজ্যার হাট-রায়াপুর, মড়কখোলার পোল থেকে লাকুটিয়া, সায়েস্তাবাদ থেকে তালতলী, হাতেমআলী কলেজ চৌমাথা থেকে টিয়াখালী, জিয়া সড়ক নথুল্লাবাদ পোল থেকে লোহার পোল, বেলতলা খেয়াঘাট থেকে লঞ্চ, সিএনবি ১নং পোল থেকে ঠাকুর বাড়ি পর্যন্ত এসব পযেন্ট থেকে প্রায় ৮শ অবৈধ অটোরিক্স থেকে চাঁদাবাজি করছেন এসব কথিত শ্রমিক নেতারা। কয়েকজন শ্রমিক নেতা নাম প্রকাশে না করার শর্তে বলেন, যারা রুট নিয়ন্ত্রণ করছেন তারাই মাসের শুরুতে বিশেষ বিট দিয়ে ট্রাফিক বিভাগ ও সাংবাদিকদের নামে মাসহারা আদায় করছে। তবে এ টাকা শেষ পর্যন্ত ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে পৌছায় কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত নন শ্রমিকরা। এদিকে আরো অভিযোগে জানাযায়,শুধু বিট না অবৈধ টোকেন বানিজ্যের থেকেও ২হাজার করে টাকা চাঁদা উঠায় কাউনিয়ার মিজান ওরফে টোকেন মিজানের একটি চক্র। অপরদিকে অটোশ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানান বলেন, ৪টি লাইন আমারা চালাই। ৪টি লাইনে ট্রাফিক বিভাগের অভিযান হলেও মড়কখোলার পোল, কাশিপুর, সিএনবি ১নং পোল, বিশ্ববিদ্যালয় রোড, জিয়া সড়ক, নতুল্লাবাদ,বাঁশের হাটখোলা, সাগরদি বাজার, ধানগবেষনা রোডে কোন অভিযান বা গাড়ি আটক নাই। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত বছরে অটোরিক্সা মালিক সমিতির নাম ভাঙিয়ে একই ভাবে বিট বানিজ্য করছিলেন সংগঠনটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন নিজাম ও সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম। পরে তাদেরকে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিলেন বর্তমান মেয়র। এর ফলে কিছুদিন বিট বানিজ্য বন্ধ ছিলো। পরবর্তী সময়ে নিজাম ও মোর্শেদদের মত করেই পুনরায় বিট বানিজ্য শুরু করে একটি মহল। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) জাকির হোসেন মজুমদার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সম্প্রতি ট্রাফিক কার্যালয়ে এক আলোচনায় ডিসি ট্রাফিক বলেন, ইতিপূর্বে পত্রিকায় ট্রাফিক পুলিশের নাম ভাঙিয়ে বিট বানিজ্যের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। গাড়ি আটক হচ্ছে,তদন্ত চলমান রয়েছে। ২৪নং ওয়ার্ড এর আ’লীগের নেতা বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোন টাকা উঠাই না। গরিব মানুষ বলে ফি করে দিছি লাইন। তবে চাঁদা উঠানোর বিষয় স্বিকার করেন, বিশ্ববিদ্যালয় রোডের শংকর বাবু, সোনামিয়ার পোল হাবুল ও সাগরদি রোডের সুমন। তাদের দাবি পুলিশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের দপ্তরে ম্যানেজ করেই বিট চালাতে হয় এবিষয় অটোগাড়ি চালকদের দাবি ট্রাফিক বিভাগ বাকি ১০টি লাইনে অভিযান চালালে বাকি চাঁদাবাজদের থেকে আমরা মুক্তি পেতাম। তাই প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন অটোচালকরা। দস্যদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com