সরকারি বিধি না মেনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৬টি ইটভাটা রয়েছে। চলতি মৌসুমে কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় ১৪টি ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। উপজেলার যত্রতত্র গড়ে উঠা ইট ভাটায় চলে যাচ্ছে আবাদি জমির উর্বর মাটি। যার কারণে আবাদি কৃষি জমি দিন দিন পুকুর, ডোবা, নালা এবং নিচুঁ জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। এমনকি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। স্থানীয় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অসচেতন জমি মালিকের সাথে আতার্ত করে সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে আবাদি জমির (টফ সয়েল্ট) উর্বর মাটি কিনে নিচ্ছে। আবার অনেক কৃষক মৎস্য চাষ করার জন্য আবাদি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে হরহামেশেই। এতে করে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অপরদিকে কৃষি জমি দারুনভাবে হ্রাস পাচ্ছে। সরকারি বিধি মোতাবেক পরিত্যাক্ত গোচারণ ভূমি, নিঁচু জলাশয়ের ধারে, নদীর ধারে এবং জনশূন্য এলাকায় ইট ভাটা গোড়ে তোলার বিধান রয়েছে। অথচ সে সব বিধি নিষেধ উপেক্ষা রাস্তার ধারে, দো-ফলা, ত্রি-ফলা আবাদি জমির মধ্যে এবং জনবসতি পূর্ণ এলাকায় দিনের পর দিন গড়ে তোলা হচ্ছে ইট ভাটা। সে কারণেই পরিবেশ দূর্ষণসহ আবাদি জমি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রশাসনের নাকে ডগার উপর দিয়ে ইট ভাটা মালিকরা সরকারি বিধি না মেনে আবাদি জমির উর্বর মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটায়। সরেজমিন উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুমাইটারী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, লিটন মিয়ার আবাদি জমির উর্বর মাটি নিয়ে যাচ্ছে জনৈক ইট ভাটা মালিক। কথা হয় লিটন মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, জমিটি উঁচু সে কারণেই ইট ভাটায় মাটি দেয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২ হতে ৩ বছর ওই জমিতে আবাদ ভালো হবে না। এরপর আস্তে আস্তে ভালো আবাদ হবে। তিনি বলেন, প্রতি বিঘা জমির ১ ফুট করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইট ভাটা মালিক দিচ্ছে ১৫ হতে ১৬ হাজার টাকা। এছাড়া, অবৈধ যানবাহন কাঁকড়া গাড়িতে মাটি ভর্তি করে বেপরোয়াভাবে নিয়ে যাওয়ার আসার কারণে কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এমনকি ধুঁলিবালিতে পথচারীদের চলাফেরার বেঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। বেপরোয়ার চলাফেরা কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট খাটো সড়ক দূর্ঘটনা। ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, সরকারি সকল বিধি মেনে ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। উন্নয়নের স্বার্থে ছোটখাট বেঘাত সকলকে মেনে নিতে হবে। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশিদুল কবির জানান, আবাদি জমির উর্বর মাটি ইট ভাটায় নিয়ে যাওয়ার কারণে নানাবিধ ফসলের ফলন দিন দিন কমে যাচ্ছে। আবাদি জমির মধ্যে ৬ ইঞ্চি হতে ৮ ইঞ্চি পর্যন্ত উর্বর মাটি থাকে। যা ফসল উৎপাদনের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। অথচ সে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। অপরদিকে ইট ভাটার ধোঁয়া পরিবেশ দূর্ষণসহ ফসলের দারুন ক্ষতি করছে। জনবসতি পূর্ণ এলাকায় ইট ভাটা গড়ে উঠায় নারিকেল, সুপারি, খেঁজুর, তালসহ বিভিন্ন ফলদ বৃক্ষের ফলন ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে। উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ আল মারুফ জানান, ইটভাটা সমুহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে। সে কারণে উপজেলা প্রশাসনের কিছু করার থাকে না।