৫ এপ্রিল, বিবিসি, রয়টার্স : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদেরকে করোনা ভাইরাস মহামারির আসন্ন ভয়াবহতা নিয়ে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, করোনা পরিস্থিতির ‘সবচেয়ে কঠিন সপ্তাহ’ সামনে পার করতে হবে। সেসময় অনেক মানুষকে প্রাণ হারাতে হতে পারে, এমন আশঙ্কা জানিয়ে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন তিনি। শনিবার (৪ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেন ট্রাম্প। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনা ভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় চীনকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার সকাল নাগাদ জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যানে যুক্তরাষ্ট্রে নভেল করোন ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ১২ হাজার ২৩৭ জন, মৃতের সংখ্যা আট হাজার ৫০১ জন ও সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৯৯৭ জন।
গত শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে সতর্ক করেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, ‘এই সপ্তাহ ও আগামী সপ্তাহের মধ্যবর্তী সময়টি সবচেয়ে কঠিন সময় হতে পারে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ সময়ে অনেক মানুষের মৃত্যু হতে পারে। ব্যবস্থা না নিলে যত মানুষের মৃত্যু হতে পারতো তার চেয়ে অনেক কম মানুষ মারা যাবে ঠিকই, তবে প্রাণহানি হবেই।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমাদের সামনে এমন সময় আসছে যা খুব ভয়ঙ্কর হতে পারে। আমরা কখনও এতো বেশি সংখ্যক মৃত্যু দেখিনি। সম্ভবত প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কিংবা এ ধরনের যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যেও না।’
ট্রাম্প জানান, এ ভাইরাসকে কঠোরভাবে মোকাবিলার জন্য করোনা কবলিত অঙ্গরাজ্যগুলোতে বিপুল মাত্রায় সামরিক সহায়তা দিতে কাজ করছে তার প্রশাসন। হাজার হাজার সেনা, চিকিৎসক, নার্সকে যুক্ত করার কাজ চলছে। শুধু নিউ ইয়র্কেই ১০০০ সেনা মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনা ভাইরাসে ইতালি ও স্পেনে মৃত্যু হার আগের দিনগুলোর চেয়ে কমতে দেখা গেলেও যুক্তরাষ্ট্রে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কেবল নিউ ইয়র্কেই আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার পেরিয়ে গেছে, মৃত্যুর সংখ্যা অতিক্রম করেছে সাড়ে তিন হাজার, এ সংখ্যা ভাইরাসটি যে দেশ থেকে উদ্ভূত হয়েছে সেই চীন থেকেও বেশি।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ এ মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ১২ হাজারের বেশি; মৃত্যু ছাড়িয়েছে সাড়ে ৮ হাজার।
বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশে মহামারি দাপিয়ে বেড়ালেও ইতালি ও স্পেনে মৃত্যুহার কমার চিহ্নে আপাত স্বস্তি মিলছে।
ইতালিতে শনিবার ৬৮১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে দেশটির বেসামরিক সুরক্ষা বিভাগ। ২৩ মার্চের পর দেশটিতে একদিনে এটিই সবচেয়ে কম মৃত্যু।
ইতালিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা গুরুতর রোগী সংখ্যাও কমেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। এদিন দেশটিতে নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চার হাজার ৮০৫ জন শনাক্ত হয়েছে, সংখ্যাটি গত কয়েকদিনের তুলনায় একটু বেশি।
ইউরোপের এ দেশটিতেই কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর সংখ্যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। শনিবার পর্যন্ত ইতালিতে ১৫ হাজার ৩৬২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস; আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি বলে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।
মৃত্যু-আক্রান্তের সংখ্যা কমছে স্পেনেও। শনিবার দেশটিতে ৮০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা শুক্র ও বৃহস্পতিবারের চেয়ে কম।
মোট আক্রান্তের সংখ্যায় স্পেন ইতালিকে ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির এক লাখ ২৬ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে; মৃতের সংখ্যাও ১২ হাজার ছুঁইছুঁই। পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশজুড়ে লকডাউনের মেয়াদ আরও তিন সপ্তাহ বাড়িয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।
আক্রান্তের সংখ্যায় জার্মানির পর থাকা ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৭ হাজার পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন নার্সিং হোমগুলোতে পড়ে থাকা মৃতদেহ যোগ করায় গত কয়েকদিনে দেশটিতে মৃতের সংখ্যায় বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।
আক্রান্ত-মৃতের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাজ্যেও। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৭০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে আগে থেকে অসুস্ত ৫ বছর বয়সী এক শিশুও আছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন ভূখ-ে কোভিড-১৯ এ চার হাজার ৩২০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়।