ইসলামে ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রত্যেকটি কাজ বা কর্ম ইখলাস ও নিয়তের ওপরই নির্ভর করে। সেই কাজ বা কর্ম হোক ছোট কিংবা বড়। কোনো কাজই ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতা ব্যতিরেকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। ইখলাস হলো আন্তরিকতার সাথে কাজ করার নাম। আভিধানিক অর্থে ইখলাস হলো রিয়া বা লোকদেখানো ভাব বর্জন করা। আর পরিভাষায় ইখলাস বলা হয়- সবকিছুর সংমিশ্রণ অর্থাৎ লোকদেখানো ভাব ও খ্যাতির লিপ্সা যা মানবাত্মাকে কলুষিত করে দেয়, এসব থেকে নিজের হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন ও মুক্ত রাখা। অন্যভাবে, ইখলাস হলো বিশ্বাস ও কর্মে আল্লাহর কাছে বান্দার সান্নিধ্যে আন্তরিকতা।
আর ইসলামে ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতা ছাড়া কোনো ইবাদত বা কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। এই সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে।’ (৯৮:৫) আরো ইরশাদ হয়েছে- ‘জেনে রেখো, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদত-আনুগত্য।’ (৩৯:৩) অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তাকে তা থেকে কিছু দেই এবং আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশই থাকবে না।’ (৪২ :২০)
মুসলিম জাতিকে ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব বোঝাতে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজরত উমার রা: বলেন, আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, ‘যাবতীয় কাজ নিয়ত বা সংকল্পের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (স্বদেশ ত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রাসূলের জন্য হবে; তাঁর হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোনো মহিলাকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তার জন্যই হবে।’ (বুখারি-১)
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’ (বুখারি-৫১৪৪, মুসলিম-২৫৬৪) সুতরাং ইখলাস ও নিয়তের বিশুদ্ধতা ছাড়া কোনো ইবাদত বা কাজ যা-ই হোক না কেন, সেটি লোকদেখানো কর্মকা- ছাড়া আর কিছুই নয়। এ থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়। লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া