শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৮ পূর্বাহ্ন

অখন্ড ভারতের স্বপ্ন সম্পূর্ণরূপে বাস্তবতা বর্জিত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

অখন্ড ভারতের স্বপ্ন সম্পূর্ণরূপে বাস্তবতা বর্জিত। কারণ ঐতিহাসিক ভাবে দেখলে না, ভারতীয় উপমহাদেশে কোন সাম্রাজ্যই সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে একটি নির্দিষ্ট শাসনের অধীনে আনতে পারেনি। মোঘল এবং মৌর্য সাম্রাজ্য হয়তো কাছাকাছি গিয়েছে তবে সেই দুই সাম্রাজ্যও সমগ্র ভারতবর্ষ জয় করতে সক্ষম হয়নি
অনেকে ব্রিটিশদের কথা বলবে তবে ব্রিটিশদের ক্ষেত্রেও এটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। গোয়া, পন্ডিচেরির মত কিছু কিছু অঞ্চল পর্তুগিজ, ফরাসিদের অধীনে ছিল। এছাড়া সমগ্র ভারতবর্ষের অর্ধেক অংশই কমবেশি স্বায়ত্তশাসিত মহারাজদের অধীনে ছিল। আর ব্রিটিশ সাম্রাজ্য না ছিল ভারতীয়দের না এটা পরিচালিত হতো ভারতবর্ষ হতে, সুতরাং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকেও এক্ষেত্রে বিবেচনায় আনা যায় না।
অখন্ড ভারত নিয়ে আরো কিছু তথ্য দেওয়ার আগে এই ধারণার উদ্ভব সম্পর্কে কিছু বলা দরকার। অখন্ড ভারতের ধারণা আসলে এসেছে অর্থশাস্ত্রের লেখক চাণক্যের মাথা হতে। ভারত বলতে তখন একটি স্থান বুঝানো হতো যা আজকে ভারতীয় উপমহাদেশ হিসেবে পরিচিত। তখন এই অঞ্চলটি বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য এবং সাম্রাজ্যে বিভক্ত ছিল। চাণক্য বিশ্বাস করতেন সমগ্র অঞ্চলটিকে একটি নির্দিষ্ট শাসন, প্রশাসন এবং কর্তৃত্বের অধীনে আনতে হবে। তার শিষ্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মাধ্যমে তিনি তার স্বপ্নের পথে অনেক দূর এগিয়েও যান। চন্দ্রগুপ্তের নাতি অশোক প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষকে পাঁচ দশকের জন্য তার করায়ত্ত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু তার মৃত্যুর পর খুব দ্রুতই মৌর্য সাম্রাজ্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে মোঘল এবং ব্রিটিশরা প্রায় সমগ্র ভারতবর্ষ দখল করতে পারলেও সাম্রাজ্য দুইটির পরিণতি দিনশেষে একই রকম হয়।
তবে এখানেও কিছু কথা বলা থেকে যায়। অখন্ড ভারত ব্যাপারটি আসলে বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের একটি ধারণা ও বিশ্বাস। এই বিশ্বাস অনুসারে ভারতের পাশাপাশি বর্তমান পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ (অনেকক্ষেত্রে নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ এমনকি আফগানিস্থান ইন্দোনেশিয়া এসকল দেশকেও বিবেচনায় আনা হয়) ভারতের ঐতিহাসিক এবং কৃষ্টিগত অংশ অর্থাৎ এই সকল দেশকে ভারতের সাথে যোগ দিতে হবে।
(হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর চোখে অখন্ড ভারত, কেউ কেউ এর থেকেও অনেক বড় অঞ্চল দাবি করে)
অখন্ড ভারতের ধারণায় বিশ্বাসীদের যুক্তি হল এসকল দেশ একসময় হিন্দু ধর্ম দ্বারা (কারো কারো মতে বৌদ্ধ ধর্মও বিবেচ্য) প্রভাবিত ছিল এবং এ সকল স্থানের ঐতিহাসিক বাসিন্দারা বর্তমান ভারতীয়দের মতোই একটি নির্দিষ্ট ধর্ম এবং ইতিহাস শেয়ার করে। সুতরাং এই সকল অঞ্চল গুলোকে ভারতের সাথে যোগ দিতে হবে এবং সম্ভব হলে এখানকার বাসিন্দাদের সনাতন ধর্মে ফেরত যেতে হবে। শিবসেনা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, আরএসএস, বিজেপি সহ অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন গুলো এই ধারণায় বিশ্বাসী। আরএসএস পন্থী ম্যাগাজিন অর্গানাইজার প্রায়ই এই কথা বলে যে শুধুমাত্র অখন্ড ভারত এবং “সম্পূর্ণ সমাজই” ভারতের মানুষকে সত্যিকারের স্বাধীনতা এনে দিতে পারে। ২০১৯ সালে ইন্দ্রেশ কুমার নামে একজন আরএসএস নেতা বলেন যে পাকিস্তান ২০২৫ সালে ভারতের সাথে যোগ দিবে, ভারতীয়রা লাহোর এবং তিব্বতের মান সরোবর লেকে অভিবাসন করবে। তিনি আরো বলেন বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই একটি ভারতপন্থী সরকার রয়েছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুকরণে ভবিষ্যতে অখন্ড ভারত গড়ে তোলা হবে।
বলাই বাহুল্য অখন্ড ভারতের স্বপ্ন সম্পূর্ণরূপে বাস্তবতা বর্জিত। পাকিস্তান, বাংলাদেশের জনগণ তো দূরের কথা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ নেপালও ভারতের সাথে যোগ দিতে রাজি হবে না। এসকল দেশের মানুষের মনে আলাদা জাতীয়তাবাদ রয়েছে এবং বর্তমান বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরা শত বছর ধরে একটি ভিন্ন ধর্ম পালন করে আসছে। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে আসার সময় নিজেদের জন্য আলাদা দেশ বুঝে নিয়েছে শুধুমাত্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশের নাগরিক হওয়ার ভয়ে। অনেকে বলতে পারেন তো কি লাভ হল পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মানুষেরা তো ঠিকই একসাথে থাকতে পারল না। এক্ষেত্রে বলতে হয় বাংলাদেশের পাকিস্তান হতে স্বাধীন হওয়া ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং জাতিগত কারণে এবং আমার মতে সেই সময়ের বাস্তবতায় যথাযথ সিদ্ধান্ত। এই ঘটনা আরো প্রমাণ করে অখন্ড ভারতের স্বপ্ন কতটা বাতুলতা যেখানে ধর্মই শুধুমাত্র দুটি ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে একত্রিত করে রাখতে পারেনা সেখানে ভারতবর্ষের মতো হাজারো ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর জন্য তা আরো বেশি রকমভাবেই অসম্ভব হবার কথা, অন্তত ভারতবর্ষের ইতিহাস তাই বলে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com