রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন

সুনামগঞ্জ-৩ আসনে নৌকা পেতে মরিয়া একাধিক প্রার্থী, বিএনপি চায় দলীয় প্রার্থী

ইয়াকুব মিয়া (জগন্নাথপুর) সুনামগঞ্জ :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৩

সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে সুনামগঞ্জ-৩ আসন। জাতীয় সংসদে এ আসনটি ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। অতীতে এ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ ও ফারুক রশীদ চৌধুরী মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে গেছেন। বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন আলহাজ্ব এমএ মান্নান এমপি। যে কারণে এ আসনটি জাতীয় সংসদে ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। এই আসনটি প্রায় সবসময় আওয়ামী লীগের দখলে রয়েছে। এই আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রয়েছে একাধিক প্রার্থী, আসনটি ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। জগন্নাথপুর প্রবাসী অধ্যূষিত উপজেলা হওয়ায় অর্থনীতিতে প্রবাসীদের অনেক অবদান রয়েছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে এমপি পদে নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীরা বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় হাই কমান্ডের সাথে চালিয়ে যাচ্ছেন জোর লবিং। দলীয় নেতাকর্মীরাও আগাম নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত হওয়ার পর প্রার্থীর পক্ষে তারা ঝাপিয়ে পড়বেন। সুনামগঞ্জ-৩ জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬শ ৪৩জন। এর মধ্যে জগন্নাথপুরে ২ লাখ ১ হাজার ৭শ ৬৪। যাদের মাঝে পুরুষ ১ লাখ ১ হাজার ৩’শ ২২ জন। মহিলা ১ লাখ ৪শ ৪০ জন ও ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে। আর শান্তিগঞ্জ উপজেলা মোট ভোটার ১ লাখ ৪২ হাজার ৮শ ৭৯ জন, পুরুষ ৭২ হাজার ৪’শ ৫২জন, মহিলা ভোটার ৭০ হাজার ৪শত ২৭ জন ও ২ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে। জানা যায়, ১৯৭০ এর নির্বাচন থেকে শুরু করে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সবসময় বিজয়ী হয়েছেন। প্রয়াত স্বাধীন বাংলার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ ৩ বার এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭০ সালে সুনামগঞ্জ- ৩ (জগন্নাথপুর-ছাতক) তৎকালীন সিলেট-৩ আসন থেকে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাতক উপজেলার ভাতগাঁও-এর আব্দুল হক বিজয়ী হন। যার মৃত্যুর পরে ছাতকের গোবিনগঞ্জে আব্দুল হক স্মৃতি কলেজ হয়েছে। এবং প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ নেতা জগন্নাথপুর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের অ্যাডভোকেট আব্দুর রইছ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে সুনামগঞ্জ- ৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট আব্দুর রইছ এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে দেওয়ান শামছুল আবেদীন এম.পি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী সুনামগঞ্জ-৩ ও সিলেট-১ আসনে বিজয়ী হয়ে কিছু দিন পর সুনামগঞ্জ-৩ আসন ছেড়ে দেন। পরে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পাটির প্রার্থী তাহার ছোট ভাই ফারুক রশীদ চৌধুরী এমপি হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ বিজয়ী হয়ে বিরোধী দলীয় উপ-নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচিত একসময়ের বামরাজনীতির সিলেট অঞ্চলের আলোচিত নাম মরহুম গুলজার আহমদ এমপি নির্বাচিত হন। কিছু দিন পর তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আবার ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ এমপি নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের আবারো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে এ আসনে নৌকা নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলজাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ মৃত্যুবরণ করেন। তাহার মৃত্যুর পর জুলাই মাসে ৪ দলীয় ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী হিসাবে ধানের শীষ নিয়ে জমিয়ত নেতা এডভোকেট মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী ১৩ মাসের জন্য এমপি হন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে এমএ মান্নান এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে আলহাজ্ব এমএ মান্নান বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতি-মন্ত্রী হন। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসাবে আলহাজ্ব এমএ মান্নান আবারো এমপি নির্বাচিত হয়ে সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রীর দায?িত্বে আছেন তিনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় টিকেট প্রত্যাশী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন নেতা। যাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী আলহাজ্ব এমএ মান্নান এমপি, স্বাধীন বাংলার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদের ছেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, নব্বই দশকের সাবেক ছাত্রনেতা, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ জামান নাসের, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আতাউর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আবুল কাশেম। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকার পরও প্রার্থী মনোনয়নে মূল প্রতিদ্ধন্ধিতায় থাকবেন মন্ত্রী এমএ মান্নান ও আজিজুস সামাদ আজাদ ডন। বিএনপির সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা হলেন, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ লে. কর্ণেল (অব.) সৈয়দ আলী আহমদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মালেক খান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনছার উদ্দিন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সাবেক এমপি এডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সুনামগঞ্জ জেলা জমিয়তের সহ-সভাপতি সৈয়দ তালহা আলম, এলডিপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলার সভাপতি সায়েদুর রহমান চৌধুরী রূপা। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চলছে এবং এবার নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। তবে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এবার বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় প্রার্থী চায়। জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক হাজী আব্দুল জব্বার জানান, সুনামগঞ্জ-৩ আসনটি সব সময় আওয়ামী লীগের দখলে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষেই কাজ করে বিজয় নিশ্চিত করা হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মিজানুর রশীদ ভূইয়া জানান, আমাদের দল অনেক বড় নমিনেশন চাওয়ার অধিকার সবারই আছে। যারা নমিনেশন চাইবে তাদেরকেও আমি অভিনন্দন জানাই। এবং নৌকার প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সবাই মাঠে কাজ করব। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জয়দ্বীপ সূত্র ধর বীরেন্দ্র জানান, জগন্নাথপুরের তৃণমূল পর্যায়ের জনসাধারণ ও আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকের প্রত্যাশা জনবান্ধব ত্যাগী পরিক্ষিত জনপ্রিয় নেতাকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রধান করা হোক, যিনি এলাকার উন্নয়ন কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালনের পাশাপাশি দলীয় কার্যক্রমে গতিশীলতা সঞ্চারিত করতে সচেষ্ট থাকবেন। জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা সাফরোজ ইসলাম মুন্না জানান, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মন্ত্রী এমএ মান্নানের বিকল্প নাই। জগন্নাথপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছালিক আহমদ পীর জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে টিকেট দিবেন তার পক্ষেই আমরা কাজ করব। তবে আজিজুস সামাদ আজাদ ডনকে নৌকা দিলে বিজয়ের সম্ভাবনা সহজ হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com