মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন শ্রীমঙ্গল এর আয়োজনে আজ শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বেলা ৩টা থেকে বিটিআরআই সংলগ্ন কাকিয়াছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শুরু হচ্ছে শ্রীমঙ্গল সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর তিন দিনব্যাপী উৎসব ‘হারমোনি ফেস্টিভ্যাল’ ২০২৫। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (গ্রেড-১) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের এবং স্বাগত বক্তব্য দেবেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো: ইসরাইল হোসেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজ নাসরীন জাহান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেট বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো: রেজা-উন-নবী, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী এবং মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ ইসলাম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পর্যটনশিল্পের প্রচার ও বিপণনের লক্ষ্যে বছরব্যাপী অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন উৎসব ও মেলা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এ উদ্যোগের আওতায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড আগামী ১০-১২ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে হারমোনি ফেস্টিভ্যাল এর আয়োজন করেছে। ইউএনও ইসলাম উদ্দিন দৈনিক খবরপত্রকে জানান, হারমোনি ফেস্টিভ্যাল এমন একটি উদ্যোগ যেখানে শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত ২৬ টি আদিবাসী সম্প্রদায়কে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসা হবে। এ আয়োজনে সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৪৪ টি স্টলের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্য, খাবার, জীবনাচার, পোষাক ইত্যাদি প্রদর্শন ও বিক্রয় করতে পারবে। এছাড়াও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি যেমন নাচ, গান, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানসহ যাবতীয় বিষয়াদি স্টেজের মাধ্যমে আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে তুলে ধরতে পারবে। এ আয়োজন শ্রীমঙ্গল ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীদের জীবনধারা, সংস্কৃতি, উৎপাদিত পণ্যের প্রচারের মাধ্যমে পর্যটনশিল্পের বিকাশ সাধন করবে। হারমোনি ফেস্টিভ্যালে খাসিয়া, গারো, মনিপুরি, ত্রিপুরা, সবর, খাড়িয়া, রিকিয়াসন, বাড়াইক, কন্দ, রাজবলব, ভূইয়া, সাঁওতাল, ওরাও, গড়াইত, মুন্ডা, কুর্মী, তুমিজ, বুনারাজি, লোহার, গঙ্গু, কড়াসহ শ্রীমংগল ও সংলগ্ন এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা তাদের পণ্য, খাবার, জীবনাচার, পোষাক নিয়ে অংশগ্রহণ করবে। প্রতিটি নৃগোষ্ঠী তাদের বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরবে এ আয়োজনের মাধ্যমে।
সবর জনগোষ্ঠীদের পত্র সওরা নৃত্য ও চড়ইয়া নৃত্য, খাড়িয়াদের খাড়ি নৃত্য, রিকিয়াসনদের লাটি নৃত্য, বাড়াইকদের কুমুর নৃত্য, কন্দদের কুই নৃত্য, রাজবধবদের উড়িয়া নৃত্য, ভূইয়াদের ভুইয়া গীত, সাঁওতালদের লাগড়ে নৃত্য, ওরাওদের ওরাও নৃত্য, গড়াইতদের গড়াইত নৃত্য, মুন্ডাদের মুন্ডারি নৃত্য, কুর্মীদের কুরমালি নৃত্য, ভূমিজদের ভূমিজ নৃত্য, বুনারাজিদের উড়িয়া ডজন, লোহারদের ভুজপুরি রামায়ন কীর্তন, গঙ্গুদের গঞ্জ নৃত্য, কড়াদের কড়া নৃত্য খাসিয়াদের ঐতিহ্যবাহী পোষাক ডিয়া কেরছা ও মালা পরিধানের মাধ্যমে নাচ ও গান, তীর ধনুক প্রতিযোগিতা, সীয়াট বাটুর (গুলতি দিয়ে খেলা), কিউ থেনেং (তৈলাক্ত বাশে উঠার প্রতিযোগিতা), ত্রিপুরা জনগোষ্ঠি কাথারক নৃত্য, বেসু নৃত্য, জুম নৃত্য, গ্যারি পুজা, ক্যার পুজা, নক থাপেং মা পুজা, কাদং (রনপা), গারো জনগোষ্ঠী জুম নৃত্য, আমোয়া দেব (পূজা), গ্রীকা নাচ (মল্লযুদ্ধ), চাওয়ারী সিকা (জামাই বৌ নির্বাচন) চাছিল নাচ (বানর নৃত্য), মান্দি নাচ, রে রে গান, সেরেনজিং (প্রেম কাহিনীর গান), মনিপুরি জনগোষ্ঠী রাস লীলা নৃত্য, পুং চলোম নৃত্য (ঢোল নৃত্য), রাধা কৃষ্ণ নৃত্য এবং সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য প্রদর্শিত হবে। খাসিয়া জনগোষ্ঠীদের পান ও বাঁশের তৈরী হস্তশিল্প নিয়ে লাইভ নিয়ে লাইভ পরিবেশনা, ত্রিপুরাদের কোমর তাত, মনিপুরিদের লাইভ তাত, চা ও রাবার প্রসেসিং, হোমস্টে, কুমারদের লাইভ মাটির জিনিসপত্র প্রস্তুত করা হবে। হারমোনি ফেস্টিভ্যালের এ আয়োজনে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন এর ১০ টি স্টল থাকবে যেখানে তাদের উদ্যোক্তাদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ করবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলও এ আয়োজনে যুক্ত থাকবে। উপজেলা প্রশাসন শ্রীমঙ্গলসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থা হারমোনি ফেস্টিভ্যালের সফল বাস্তবায়নে কার্যকর সহযোগিত প্রদান করবে। এই উৎসব ক্ষুদ্র ও নৃ-জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।