কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে রৌমারী রাজিবপুর উপজেলায় মোট ১৬টি ইট ভাটার কার্য্যক্রম চলছে। যার মধ্যে ৭টি ইটভাটার অনুমোদন থাকলেও বাকি ৯ ইটভাটাই চলছে অবৈধভাবে। সবকটি ইটভাটাই কৃষি জমিতে অবস্থিত। প্রশাসনের তেমন কোন পদক্ষেপ না থাকায় দেখা দিয়েছে নান প্রশ্ন। কোনরকম নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর চলছে এসব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। এসব ইটভাটায় মাটির যোগান দিতে কাটা হচ্ছে কৃষি জমি। এতে কমছে উপজেলার আবাদি জমির পরিমান। ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমির।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্রে জানা যায়, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠনকে ম্যানেজ করে এসব কর্মকান্ডের সাথে জড়িত প্রভাবশালী ইটভাটা মালিকরা। ফলে বারবার এইসব অবৈধ ইটভাটা গুলিতে হঠাৎ একদিন জরিমানা হলেও রহস্যজনকভাবে তা থেমে যায়। এসব ভাটার ধোয়ায় আশপাশের প্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ি, গাছ পালা, নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে বৃদ্ধ ও শিশুদের শ্বাস নিশ্বাসে অসুবিধায় শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। গত ৯ ডিসেম্বর ৩ টি ইটভাটা মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানাসহ নতুন প্রস্তুতকৃত ৫০ হাজার টাকা মুল্যের ইট ধ্বংস করেছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেড রাসেল দিও ও সঙ্গে থাকা সহকারি পরিচালক পরিবেশ অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম রেজাউল করিম। অবৈধভাবে পরিচালনায় ৯ টি ইটভাটার মধ্যে মেসার্স আরএমজি ব্রিক্স প্রোঃ বানিজ মিয়া সায়দাবাদ, মেসার্স এডি ব্রিক্স প্রোঃ হারুনর রশিদ নটান পাড়া, মেসার্স ডিজিটাল ব্রিক্স প্রোঃ ছাইফুর রহমান কোনাচি পাড়া রৌমারী, মেসার্স ভাই ভাই ব্রিক্স প্রোঃ আবুল হোসেন দাঁতভাঙ্গা টাপুরচর হাজির হাট, মেসার্স এইচকে ব্রিক্স-১ প্রোঃ জেসমীন নাহার লাকী তুরারোড, মের্সাস এমজিএস ব্রিক্স প্রোঃ আব্দুল মান্নান সায়দাবাদ, মেসার্স আকাশ ব্রিক্স প্রোঃ হাবিবুর রহমান ধুলাউরি রাজিবপুর, মেসার্স এডিবি ব্রিক্স প্রোঃ তহিদুল ইসলাম ধুলাউরি স্লুইচ গেট রাজিবপুর, মেসার্স বিএসবি ব্রিক্স প্রোঃ বিশ্বজিৎ সাহা রাজিবপুরসহ কোনটিরই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র বিহীন অবৈধ ইটভাটা স্থাপন, প্রস্তুত ও পরিচালনায় সরকারি নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে ইট পোড়ানো হচ্ছে। চাক্তাবাড়ি ডিজিটাল ইটভাটার নিকটতম ধান চাষি কৃষকগণ বলেন, ইটভাটার ধোয়ায় আমাদের অনেক ধান নষ্ট হয়ে যায়। গত বছর এমনি ভাবে ৫/৬ বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়েছে। অন্যদিকে ইটভাটার পাশেই চাক্তাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগনের স্কুল চলাকালিন সময় খুব সমস্যা হয়ে দাড়ায়। প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দেয়ার পরেও ভাটার মালিকের কিছুই হয়নি। কারন তারা প্রভাবশালী। তাদেরকে তো কেউ কিছুই করতে পারবে না। উপজেলা ইটভাটা মালিক বানিজ মিয়া, আবুল হোসেন ও রাজিবপুর বিশ্বজিৎ সাহাসহ অনেকেই জানান, আমরা ইট ভাটায় কাঠ পোড়াইনা, শুধু প্রথম চুলা জ্বালাতে কয়েকশত মন কাঠ দিয়ে আগুন ধরাতে হয়। বাকী সময় কয়লা দিয়েই ইট পোড়ানো হয়। বর্তমানে কয়লার সংকট ও দাম বেশী হওয়ায় ইটের দাম বেশী পড়ে যায়। বাধ্য হই ইটের দাম বেশী নিতে। তবে আমরা অনেকেই ছাড়পত্র ও লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত করেছি। পরিবেশ অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম সহকারি পরিচালক রেজাউল করিম জানান, গত ৯ ডিসেম্বর রৌমারীতে ৩টি ভাটার জমিরামান করা হয়েছে। বাকি অবৈধ ইটভাটা গুলিরও ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা সহকারি কমিশনার ভুমি ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেড রাসেল দিও বলেন, রৌমারী রাজিবপুরে ৮/৯ টি ইটভাটা অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমি দ্রুত তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করবো।