জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) এক দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনের বিরুদ্ধে। গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের (এমএইচ) পাশের জঙ্গলে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বহিরাগত যুবক মামুন। মোস্তাফিজুর রহমান মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। এ ঘটনায় তাকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, অভিযুক্ত মোস্তাফিজকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে। সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাসিদ বলেন, ‘ভুক্তভোগী থানায় উপস্থিত হয়ে ঘটনাটি জানিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এদিকে এ বিষয়ে জানতে মোস্তাফিজকে ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আমরা রাষ্ট্রীয় আইনে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করবো।’ ভুক্তভোগী নারী জানান, আশুলিয়ার জিরানী এলাকায় থাকেন তারা। তাদের বাসায় ভাড়া থাকতেন অভিযুক্ত মামুন। আর মামুনের পূর্বপরিচিত মোস্তাফিজ। মামুন মাঝে মাঝে এমএইচ হলে এসে মোস্তাফিজের কাছে থাকতেন।
তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যায় তার স্বামীকে নিয়ে জাবিতে ঘুরতে আসেন মামুন। তার স্বামী মামুনকে কিছু আসবাবপত্র কিনবেন বলে জানান। তখন মামুন তাকে বলেন, এক আসবাবপত্র কেনার দোকানে তিনি টাকা পান। তবে দোকানদার দিচ্ছে না। তাই ওই দোকান থেকে আসবাবপত্র কিনে টাকাটা যাতে তিনি মামুনকে দেন। আসবাবপত্র কিনতে দোকানে যাওয়ার সময় ফোন করে তাকে ডেকে নেন তার স্বামী। তাকে জাবিতে আসতে বলেন। আর মামুন কয়েক দিন ক্যাম্পাসে মোস্তাফিজের সঙ্গে থাকবেন তাই মামুনের কিছু জামা-কাপড়ও আনতে বলেন। এর মধ্যে মোস্তাফিজ ও মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে মীর মশাররফ হোসেন হলের এ-ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখেন। ওই নারী ক্যাম্পাসে এলে তার কাছ থেকে জামা-কাপড় নিয়ে সেগুলো কক্ষে রেখে আসতে যান মামুন। এরপর মামুন ফিরে এসে ওই নারীকে বলেন, তার স্বামী হলের অন্য ফটক (জঙ্গলের দিক) দিয়ে আসবেন। তাই তাকেও সেদিকে যেতে বলেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, সেদিকে যাওয়ার সময় তাকে হলসংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে মোস্তাফিজ ও মামুন ধর্ষণ করেন।
ছাত্রলীগ নেতাসহ ৪ জনের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন: সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগের এক নেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টার দিকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফি। এর আগে, শনিবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। সংবাদ সম্মেলন শেষে আসামিদের ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর, ৪৬ তম ব্যাচের সাগর সিদ্দিক ও ৪৫ তম ব্যাচের হাসানুজ্জামান।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ভুক্তভোগীর স্বামী রাতেই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদকে ধর্ষণে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে মারধর ও আসামিদের পালাতে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। ভুক্তভোগীকে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে আসামিদের সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
অভিযোগ, শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ আবাসিক হলের ৩১৭ নং কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে কৌশলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন আসামি মোস্তাফিজ ও মামুনুর রশীদ মামুন।