পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা হতাশ
ঈদ আসন্ন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। এসময়ে সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় থাকার কথা ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। তবে গতকাল সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে যাত্রীর বাস টার্মিনালটিতে যাত্রীর চাপ চোখে পড়েনি। বেশ কয়েকটি কাউন্টার ছিল বন্ধ। তবে কয়েকটি কাউন্টার জানিয়েছে, তাদের সব টিকিট অগ্রীম বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তারা কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করছেন না। যাত্রী পূর্ণ করেই ছাড়ছে বেশিরভাগ বাস।
রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের বাসগুলোর টিকিট কাউন্টারে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। এখনো যাত্রীর আশায় বসে আছে দক্ষিণবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার পরিবহনগুলো। গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী বাস টার্মিনালে অবস্থান করে দেখা গেছে, যাত্রী এলেই কাউন্টারে থাকা পরিবহন শ্রমিকরা তৎপর হচ্ছেন টিকিট বিক্রিতে। অন্যদিকে টিকিট কিনে ফাঁকা টার্মিনালে বাস ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন যাত্রীরা। বরিশালগামী সূর্যমুখী বাসের শ্রমিক জুয়েল জানান, গতকাল সকাল থেকে সিট ফাঁকা নিয়ে দুটি বাস ছেড়েছে। সাভারের পর যাত্রী পূর্ণ হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের শ্রমিক মোহাম্মদ তুহিন বলেন, এখন রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাস কাউন্টার। যাত্রীরা সিএনজি ভাড়া দিয়ে কেন গাবতলী আসবে? এজন্য গাবতলীতে যাত্রী নাই। সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসের কাউন্টারে বসা মাসুদ জানান, সকালে তাদের দুটি গাড়ি ছেড়ে গেছে। বিকেলে আরও কয়েকটি যাবে। অগ্রীম সব টিকিট বিক্রি হওয়ায় কাউন্টার থেকে এবার টিকিট বিক্রি হচ্ছে না।
কুষ্টিয়াগামী রাবেয়া এক্সপ্রেসের কাউন্টার ম্যানেজার বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত যাত্রীর চাপ ছিল। সকালে ৮টি বাস ছেড়েছে। প্রতিটি যাত্রীতে পূর্ণ ছিল। এখন ২-১ সিট ফাঁকা রেখে বাস ছাড়তে হচ্ছে। ঈদ আসন্ন। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। এসময়ে গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় থাকার কথা ছিল যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় তিনি বলেন, পদ্মা সেতু, ট্রেনসহ অনেক কারণেই যাত্রী কমে গেছে। সন্ধ্যার পর কিছু যাত্রী বাড়বে।
যাত্রীদের অভিযোগ, পরিবহনগুলো নির্ধারিত স্টপেজ অনুযায়ী নয়, ইচ্ছামতো ভাড়া রাখছে। পাংশাগামী যাত্রী মিজান বলেন, আমার কাছ থেকে কুষ্টিয়ার ভাড়া রাখা রয়েছে। যদিও আমি যাবো রাজবাড়ীর পাংশা। টার্মিনালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মালিক প্রতিনিধি ও বিআরটিএর প্রতিনিধি সমন্বয়ে বসেছে ভিজিল্যান্স টিম। বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। বাসগুলো চার্ট মেনেই ভাড়া নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মিম সুমাইয়া বলেন, যাত্রীর চাপ নেই। ভোগান্তি ছাড়াই ঢাকা ছাড়তে পারছি। ভাড়া নিচ্ছে ৭৫০ টাকা। ঈদে ভাড়া একটু বেশি নিচ্ছে।
আর দুদিন পরেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। দূর-দূরান্তে থাকা প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ছাড়বেন অনেক মানুষ। গতকাল সোমবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো যাত্রীর সংখ্যা কম। এতে হতাশ পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আর দুদিন পরেই ঈদ, কিন্তু অন্যান্য ঈদে এ সময়ে যাত্রীর যে চাপ থাকে, তা থেকে এখন অনেক কম। তারা বলছেন, গাড়ি পূর্ণ হতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এসময়ে এমন হওয়ার কথা না। বিগত ঈদগুলোতে তারা এমন পরিস্থিতি দেখেননি বলেও দাবি করেছেন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে যাত্রাবাড়ীর জনপথ মোড়সহ সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কিছু যাত্রী রয়েছে। পরিবারের সদস্য, ব্যাগ, জিনিসপত্র নিয়ে কেউ গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া গাড়ির কর্মীরা যাত্রীদের জন্য হাঁক-ডাক দিচ্ছেন। গাড়ি পূর্ণ হতে সময় লাগছে। যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, আগের চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে পরিবহন মালিকরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, দু-একজন বেশি ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
বরিশালের উদ্দেশ্যে বিএমএফ পরিবহনের একটি গাড়ি সায়েদাবাদ ছেড়ে যাচ্ছিল। বাসের যাত্রী শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্য সময় বরিশালে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া থাকলেও এখন ৫৫০ টাকার নিচে যাওয়া যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা সিডিএম পরিবহনের বাসে জনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। যাত্রীরা জানিয়েছেন, আগে এ ভাড়া ছিল ৪০০ টাকা। কুমিল্লা রুটে চলাচল করা এশিয়া লাইন পরিবহনের চালক মো. মনির হোসেন বলেন, সকালে আইসা বইসা আছি। এখন সাড়ে ১০টা বাজে, গাড়ি ভরে নাই। ঈদের সময় হলেও যাত্রী খুবই কম। মানুষ বাড়ি যাইবো কেমনে, সব জিনিসের যে দাম। মানুষের পকেটে টাকা নাই। নাঙ্গলকোট রুটে চলাচল করা জোনাকি পরিবহনের কর্মী মো. শাহজাদ বলেন, শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত চার দিনে আমার মিনিমাম খাওয়া খরচ বাদে ৪ হাজার টাকা থাকার কথা। সেখানে আমার ৫০০ টাকাও নাই। মানুষ এখন পর্যন্ত বাড়ি যাচ্ছে না। মনে হয়, এখনো বেতন পায় নাই। সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বেলা ১১টার দিকে বলেন, সায়েদাবাদে যাত্রী খুবই কম। ভোরবেলা সেহরির পরে কিছু যাত্রী হয়েছিল। এরপর যাত্রী নেই। অন্য ঈদগুলোতে এসময় এমন অবস্থা হয় না। যাত্রী এত কম হওয়ার কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এবার ছুটি লম্বা। মানুষ হয়তো আস্তে ধীরে যাচ্ছে। অফিস আদালত-তো এখনো খোলা। কালকে থেকে যাত্রী হবে বলে আশা করছি। ভাড়া বাড়ানোর অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ডেকে ডেকে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে সেখানে ভাড়া বাড়ে কীভাবে? যাত্রীর চাপ হলে সেখানে না হয় ভাড়া বাড়ার বিষয়টি আসে। এ বাস মালিক আরও বলেন, আগে আপনি নোয়াখালীর গাড়িতে লাকসাম গেছেন ২০০ টাকায়। কিন্তু এখন লাকসাম গেলেও নোয়াখালীর ভাড়া ৪৭২ টাকা আপনাকে দিতে হচ্ছে। এরকম ক্ষেত্রে কিছু ঝামেলা হচ্ছে। আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এগুলো নিয়ে আলোচনাও করেছি। সকাল বেলা বরিশালে চলাচল করা গোল্ডেন লাইনের একটা গাড়িতে ভাড়া বেশি নেওয়ায় তাদের কাউন্টার আমরা বন্ধ করে দিয়েছি, বলেন আবুল কালাম।