চাল উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার চাল আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারি চালের মজুদ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। ফলে এখন সরকারি গুদামে চাল-গম মিলিয়ে মজুদের পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে ১২ লাখ ২২ হাজার টনে। কিন্তু এর বিপরীতে গেল বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ২৫ হাজার টন এবং এর আগের বছর ২০২২ সালে ছিল ১৪ লাখ ২২ হাজার টন। অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন সময়ে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। অথচ গত চার বছর ধরে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দর ঊর্ধ্বমুখী। আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমলেও দেশের বাজারে এর কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। গত রোববার অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক দেশে মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন (এর মধ্যে আউশ মৌসুমে ৩৬ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন, আমন মৌসুমে ১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন ও বোরো মৌসুমে ২ কোটি ১৫ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টন)। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর হিসাব মতে, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মোট চাল উৎপাদিত হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন (এর মধ্যে আউশ মৌসুমে ২৯ লাখ ১ হাজার মেট্রিক টন, আমন মৌসুমে ১ কোটি ৫৪ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন ও বোরো মৌসুমে ২ কোটি ৭ লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন)।
এ দিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মোট চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৪ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন (এর মধ্যে আউশ মৌসুমে ৩৯ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন, আমন মৌসুমে ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন এবং বোরো মৌসুমে ২ কোটি ২২ লাখ ৬৬ হাজার মেট্রিক টন)। এর বিপরীতে আউশ মৌসুমে ২৯ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন এবং আমন মৌসুমে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চাল উৎপাদিত হচ্ছে না। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে গত ৭ ফ্রেব্রুয়ারি আমদানি শুল্ক অব্যাহতি দিয়ে শুধু ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক নির্ধারণ করে বেসরকারি খাতে চাল আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। কিন্তু দুই মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বেসরকারি পর্যায়ে কোনো চাল আমদানি হয়নি। তবে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে বেসরকারি ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবিত মোট চাল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৭ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ৬৭ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে (মার্চ ২০২০-মার্চ ২০২৪) অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য প্রায় ১৮ টাকা বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে ২০২০ সালের মার্চে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল সর্বনি¤œ। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের সর্বনি¤œ দর ছিল ২০২২ সালের মার্চে। তখন এটি ছিল ২০২০ সালের চেয়েও কম। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাজারে তখন প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল ২০২০ সালের চেয়েও প্রায় ১২ টাকা বেশি। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমলেও ওই সময়ে অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২০ সালের মার্চে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল প্রতি কেজি ৩১ টাকা ৪৬ পয়সা। ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন সিদ্ধ চালের এফওবি দর ছিল ৪৭৯ ডলার (থাইল্যান্ড) ও ৩৬৪ ডলার (ভারত) এবং থাইল্যান্ডের আতপ ৪৭৫ ডলার।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দর অনেকটা কমে যায়। ওই সময় প্রতি মেট্রিক টন সিদ্ধ চালের এফওবি দর ছিল ৩৯৯ ডলার (থাইল্যান্ড) ও ৩৬৪ ডলার (ভারত) এবং থাইল্যান্ডের আতপ ৪০০ ডলার। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও এ সময় অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের খুচরা মূল্য ছিল ৪৩ টাকা ২৪ পয়সা। অর্থাৎ আগের চেয়ে বেশি। এখনো চালের বাজার চড়াই রয়েছে।