শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫১ পূর্বাহ্ন

ইসলামে শ্রম ও শ্রমিকের অধিকার

আবদুল্লাহ নুর
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

ইসলাম সাম্যের ধর্ম। মানবতা ও সহানুভূতি ইসলামের অন্যতম মূলনীতি। শ্রমিকের শ্রম ও মালিকের ক্ষমতায়নে রয়েছে ইসলামে বিশেষ নির্দেশনা। আল্লাহ তার ইবাদতের পরে মালিক ও শ্রমিক উভয়কে আয়-রোজগারের খোঁজে বেরিয়ে যেতে বলেছেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে জীবিকা উপার্জনের জন্য তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।’ (সূরা জুমা-১০)। রাসূল সা: বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করেছেন হালাল রোজগার করার জন্য। এমনকি প্রত্যেকের জন্য হালাল উপার্জন করা ফরজও। হাদিস শরিফে রাসূল সা: বলেন, ‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজগুলোর পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি, কানযুল উম্মাল-৯২০৩)
শ্রমের মর্যাদা : পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য হালাল জীবিকা উপার্জন করা ফরজ। আর হারাম উপার্জন করা নিষিদ্ধ। হারাম উপার্জনের অর্থে পালিত দেহ কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। নবী সা: একবার হজরত কা’ব বিন উজরাহ রা:-কে ডেকে বললেন, হে কা’ব! শুনে রাখো, ওই দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম থেকে সৃষ্ট। কেননা জাহান্নামের আগুনই তার অধিক উপযোগী।’ (সুুনানে তিরমিজি-৬১৪)
হালাল কর্ম যতই ছোট হোক না কেন, তাকে তুচ্ছ করা ঠিক না। যুগে যুগে প্রত্যেক নবীই কোনো না কোনো কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। আর হাদিসে নিজ হাতের উপার্জনের খাদ্যকে উত্তম খাদ্য বলা হয়েছে। হজরত মিকদাদ রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই, যা মানুষ নিজ হাতে উপার্জনের মাধ্যমে ক্রয় করে। নবী দাউদ আ: নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।’ (বুখারি-২০২৭)
শ্রমিকের অধিকার : প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ নিজ স্তর অনুযায়ী কিছু অধিকার রয়েছে। মালিক-শ্রমিকও এর ব্যতিক্রম নয়। তবে দু’জনের মধ্যে সহানুভূতিশীলতা ও দায়িত্ববোধ থাকলে উভয়েই উপকৃত হতে পারবে। বিশেষত মালিককে তার শ্রমিকের প্রতি হতে হবে দয়াশীল। আর তার থাকতে হবে ক্ষমার মতো মহৎ গুণ। কেননা, যে ব্যক্তি কাজ করে ভুল তারই বেশি হয়। রাসূল সা: শ্রমিককে প্রতিদিন ৭০ বার ক্ষমা করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে এক ব্যক্তি এসে রাসূল সা:-কে জিজ্ঞেস করলেন, কর্মচারীকে কতবার ক্ষমা করব? রাসূল সা: কোনো উত্তর না দিয়ে নীরব থাকলেন। তিনি আবারো জিজ্ঞেস করলে নবীজী সা: এবারো কোনো উত্তর দিলেন না। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করার পর উত্তরে বললেন, ‘প্রতিদিন ৭০ বার ক্ষমা করবে’। (সুনানে আবু দাউদ-৫১৬৬)
একজন শ্রমিক গায়ের রক্ত ঘামে পরিণত করে হালাল রুজি রোজগার করেন। চুক্তি অনুযায়ী বেতন-ভাতা তার প্রাপ্য। আর এই প্রাপ্য পরিপূর্ণভাবে দেয়ার দায়িত্ব হলো মালিকের। মালিক যদি শ্রমিকের বেতন দিতে গড়িমসি করে তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করবেন। হাদিসে এসেছে, রাসূল সা:-এর ইন্তেকালের আগ মুহূর্তে যখন তার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল, স্বর একেবারেই ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল, তখন উম্মতের উদ্দেশে সর্বশেষ ওসিয়ত করেছেন এ বলে, ‘তোমরা অধীনস্থদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।’ (সুনানে আবি দাউদ-৫১৫৮)
মালিক-শ্রমিকের সম্পর্ক : পৃথিবীর সব মুসলমান এক দেহের মতো। সবাই পরস্পর ভাই। তবে মালিক ও শ্রমিক উভয়ে ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও উভয়ে পরস্পর ভাইয়ের সম্পর্ক। তাকে তুচ্ছরূপে গণ্য করা নিষিদ্ধ। ইসলাম মালিক ও শ্রমিকের পোশাক, খাবার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধায় উভয়কে সমান অধিকার দিয়েছেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: মালিকপক্ষকে লক্ষ করে বলেন, এসব শ্রমিক তোমাদের ভাই, মহান আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমাদের অধীনস্থ শ্রমিককে তাই খেতে দেবে যা তুমি নিজে খাও এবং তাকে এমন পোশাক দেবে যেমন পোশাক তুমি নিজে পরিধান কর এবং তাদের সাধ্যের বাইরে কোনো কিছু তাদের উপর চাপিয়ে দেবে না। যদি কোনো কষ্টকর কাজ তাদের উপর চাপিয়ে দাও তাহলে অবশ্যই তোমরা তাদের সাহায্য করবে।’ (মুসলিম শরিফ-১৬৬১)
তবে একজন শ্রমিকেরও রয়েছে দায়িত্ব। দায়িত্ববান শ্রমিক মালিকের কাজকে সর্বদা নিজের কাজ মনে করবে এবং কাজকে আমানতদারিতার সাথে আনজাম দেবে। কেননা, প্রত্যেক ব্যক্তিকে প্রদত্ত দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককে সে দায়িত্ব সম্পর্কে জবাব দিতে হবে।’ (বুখারি-৭১৩৮)। লেখক : আলেম ও প্রবন্ধকার




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com