শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪, ০৯:২৪ অপরাহ্ন

শতভাগ দেশীয় উপকরণের সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না চামড়া শিল্প

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

চামড়া ও চামড়াজাত খাত দেশের এমন একটা শিল্প যার কাঁচামাল তথা উৎপাদনের উপকরণ শতভাগ দেশীয় উৎস থেকে পাওয়া যায়। এমনকি দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে আমরা প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি।

চামড়া খাতের মূল্য সংযোজন শতভাগ। অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা তা কাজে লাগাতে পারছি না। যদিও সরকার কয়েক বছর ধরে বলছে, এ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব কিন্তু রপ্তানি আয় ১০০ কোটি ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। রপ্তানি আয়ের অধিকাংশই আসছে চামড়ার জুতা থেকে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আয় কমেছে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে ৯৬ কোটি ১৫ লাখ ডলার, যা আগে ছিল ১১২ কোটি ডলার।
‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বাজার। কিন্তু বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সেখানে আশানুরূপ ভালো করতে পারছেন না’- আব্দুল মোমেন ভূঁইয়া
চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য থেকে আয় সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম। জুলাই-এপ্রিল সময়ের জন্য সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১২২ কোটি ডলার, যার বিপরীতে আয় হয়েছে ৯৬ দশমিক ১৫ কোটি ডলার।
চামড়ার জুতা থেকে রপ্তানি আয় ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ৪৭ দশমিক ৭২ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রক্রিয়াজাত চামড়া থেকে আয় ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়ে ১২ দশমিক ৫৭ কোটি ডলার হয়েছে। একই সময়ে আগের বছরে ছিল ১১ দশমিক ৪৫ কোটি ডলার। চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি কমেছে অতি সামান্য। গত বছর একই সময়ের তুলনায় ০ দশমিক ৮১ শতাংশ কমে আয় দাঁড়িয়েছে ৩৫ দশমিক ৮৫ কোটি ডলার।
চামড়ার জুতা থেকে রপ্তানি আয় কমলেও কৃত্রিম চামড়ার জুতা থেকে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এ খাতটি গত ১১ মাসে আয় করেছে ৪৬ দশমিক ৩৩ কোটি ডলার। একই সময়ে গত বছরের আয় ছিল ৪৩ কোটি ডলার।
বৈশ্বিক বাজারে পণ্যের চাহিদার ভাটা ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের অভাবকে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা। তারা মনে করেন, কমপ্লায়েন্সের অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না। অন্যদিকে, পরিবেশের রক্ষায় যে সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় তা প্রতিপালনে ব্যর্থতার কারণে বৈশ্বিক ক্রেতারা পণ্য নিতে আগ্রহী নন।
‘হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হলেও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা’- মো. সাখাওয়াত উল্ল্যাহ
এছাড়া বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমেছে। কারণ মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমেছে। অন্যদিকে আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ঋতু অনুযায়ী চামড়াজাত পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে রপ্তানি বাজারে চাহিদা কম। জাপানের বাজারে মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে সেখানেও রপ্তানি পণ্যের চাহিদা কমেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলে মনে করেন এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন ভূঁইয়া।
আব্দুল মোমেন ভূঁইয়া বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি বড় বাজার। কিন্তু বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সেখানে আশানুরূপ ভালো করতে পারছেন না। ক্রেতা ধরতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ফলে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আমেরিকান বাজারের সুযোগটা কাজে লাগাতে পারছি না।’
তবে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্ল্যাহ বলেন, রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হলেও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের অভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, পরিবেশ রক্ষায় যে সব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয় তা প্রতিপালনে ব্যর্থতার কারণে বৈশ্বিক ক্রেতারা পণ্য নিতে আগ্রহী নন। যে কারণে শতভাগ দেশীয় কাঁচামাল থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারছেন না।
‘আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোর কাছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করার জন্য চামড়া প্রক্রিয়াজাত এবং চামড়া পণ্য প্রস্তুতকারীদের আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ কারখানার এ সনদ নেই। ফলে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের অবস্থান শক্ত করতে পারছি না। প্রতিযোগী দেশগুলোয় যেমন: ভারতে ৩৫০টির বেশি সনদধারী ট্যানারি আছে। অথচ আমাদের এ সংখ্যা ১০টিরও কম। নদী ও পরিবেশ দূষণ কমাতে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু কয়েক বছরে এর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। সাভারে বর্তমান কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) অসম্পূর্ণ থাকায় দূষণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি বলে মন্তব্য করেন ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সাভারে চামড়া শিল্প নগরে এখনও সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হচ্ছে না। উন্মুক্ত জায়গায় কঠিন বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। অন্যদিকে সাভারে বর্তমান কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) অসম্পূর্ণ থাকায় দূষণ সমস্যার কোনো সমাধান মিলেনি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বেসরকারি ইটিপি স্থাপন দরকার।’
সিপিডির গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের চামড়া শিল্প দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ।’
তবে পরিবেশগত কারণে রপ্তানি সেক্টরের ক্ষতি হচ্ছে বলে যে দাবি সেটা পুরোপুরি মানতে রাজি নন আব্দুল মোমেন ভূঁইয়া। তার যুক্তি, ছোট কোম্পানিগুলো কমপ্লায়েন্স রক্ষা করতে পারছে না। যারা বড় কোম্পানি এবং রপ্তানি করে, তারা অনেকেই এখন সম্পূর্ণরূপে কমপ্লায়েন্ট এবং যাবতীয় মান রক্ষা করে রপ্তানি করছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com