রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ অপরাহ্ন

সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গণবিচ্ছিন্ন সরকার যা ইচ্ছা তাই করছে: মির্জা ফখরুল

সাইফুর রহমান
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট, ২০২৪

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গণবিচ্ছিন্ন সরকার আইন, সংবিধান, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি, মানবিকতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে জনরোষ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে সুবিধা ও ইচ্ছামাফিক যা ইচ্ছা তাই করছে। এসব করতে গিয়ে তারা রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ছিন্নভিন্ন করে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চরিত্র গুম করেছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে সরকার বর্বরভাবে নস্যাত করতে যেয়ে একনায়কতন্ত্র এবং ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
গতকাল বুধবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে বর্বরোচিত আক্রমন চালিয়ে গণহত্যা করে সরকার অমার্জনীয় অপরাধ করে জানতে চায় কি তাদের অপরাধ? তাদের অপরাধের তালিকা এতই দীর্ঘ যে বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, এখনো অনেক অভিভাবক তার শিক্ষার্থী সন্তানের খোঁজ পাচ্ছে না। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসরুর হাসানকে ডিবি গত ২৫ জুলাই রাতে তুলে নিয়ে এলেও তার অভিভাবকরা থানা, ডিবি অফিস, বিভিন্ন হাসপাতালে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে গতকাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করতে আসলে মাসরুরের বাবা ও ভাইকে ডিবি সেখান থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরকম অসংখ্য শিক্ষার্থীদের খোঁজ তাদের অভিভাবকরা না পেয়ে উদ্বিগ্ন, অসহায় অবস্থায় আছেন। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে হাজির করার আইন থাকলেও ডিবি হেফাজতে ৪/৫ দিন রেখে বেআইনি কাজ করছে গণবিরোধী সরকার। আবার আটক না করেই নিরাপত্তার নামে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে তুলে এনে তাদেরকে জিম্মি করে রাখেছে। আইনি ভিত্তি ছাড়াই হেফাজতের কাহিনী নজিরবিহীন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বল পূর্বক বন্ধ করতেই সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বেআইনি কাজ করছেন, দিবালোকের মতো তা স্পষ্ট। সান্ধ্যকালীন কারফিউ চলাকালীন এলাকা ভাগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী‘ব্লক রেইড’ পরিচালনা করছে ও নির্বিচারে ছাত্র গ্রেফতার করে অভিভাবক, তরুণ সমাজ এবং জনমনে ভীতি ও ত্রাসের সঞ্চার করছে। এসব করে কোনো লাভ হয়নি, বরং সরকারের কূটকৌশল উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যোমে আন্দোলন এগিয়ে নিচ্ছেন জনগণের সমর্থনে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিজেরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্যডার দিয়ে গণহত্যা, নৈরাজ্য চালিয়ে নির্লজ্জ সরকার লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোকের নামে মায়াকান্না করলেও প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখান করে গতকাল যে অভূতপূর্ব লাল ডিজিটাল প্রতিবাদের সৃষ্টি করেছে, তাতে আপামর জনসাধারণের ঐক্য জানান দিয়েছে। জনসাধারণ খুনি সরকারের লোক দেখানো রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে গণহত্যার সরকারকে দায়ী করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজও ঢাকা, চট্টগাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ, গ্রেফতার-নির্যাতনকরে বাধা প্রধান করে। আদালত চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা জনগণের সমর্থনে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করে গণহত্যার বিচার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেছে। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি পালনেও সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে বাধা প্রদান ও শিক্ষার্থীদের আটক করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোক আহত হন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলি চালানোর প্রমাণ থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্মকর্তাদের গ্রেফতার না করে অপরাধীকে খুঁজে বেড়ানো এবং ধরিয়ে দেয়ার আহ্বানকে উপহাস মাত্র। সরকারের নির্দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা নির্বিচারে গুলি করে শত শত ছাত্র জনতার প্রাণ কেড়ে নিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে, এটা প্রমাণিত সত্য। সরকার জনগণের বিরুদ্ধে যেনো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকার নিজেদের রক্ষার জন্য প্রকৃত হত্যাকারীদের না ধরে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্র গণআন্দোলন বন্ধ করতে রাজনৈতিক সভা সমাবেশ বন্ধ, সান্ধ্য আইন জারী ও সেনাবাহিনী নামিয়ে গণগ্রেফতার করে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকার প্রতিদিনই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার করে মামলা, হামলা করে এবং রিমান্ডে রেখে নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। প্রতিদিনই মিথ্যা মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসম মিথ্যা মামলায় আসামি কারা, অনেক ক্ষেত্রে মামলার বাদিই জানেন না। মৃত ব্যক্তি, বিদেশী অবস্থান করছেন এমন অনেককেই এসব মামলার আসামি করা হচ্ছে। এমন মামলায় সাভারের মৃত আজগর আলী, বিদেশে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, সংসদে বিরোধী দলীয় সাবেক চীফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুকসহ এমন অনেককে আসামি করা হয়েছে। এমনকি অন্য একটি মামলায় সাত মাস আগে মৃত্যুবরণকারী সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মরহুম ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। গতকাল পুলিশ মরহুম এই বিশিষ্ট আইনজীবীকে গ্রেফতার করতে তার বাসায় হানা দেয়। আন্দোলনের আগে থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করলেও এবং বিএনপির গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক প্রফেসর ডক্টর মোরশেদ হাসান খান তার ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকলেও তাদের বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হানা দিচ্ছ। একজন বিচারপতির শিক্ষার্থী ছেলেকেও মিথ্যা মামলায় আটক করে রিমান্ডে নিয়ে হয়রানি নির্যাতন করা হয়েছে। এ ধরনের হয়রানি, নির্যাতনের শত শত ঘটনা আছে, যার বিবরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এসব ঘটনা শুধু নির্দয়, অমানবিকই নয়, সরকারের নির্লজ্জ প্রতিহিংসা ও ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এছাড়াও পুলিশ যাদেরকে গ্রেফতার করেছে তাদের তাদের সিংহভাগে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিনই পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ যৌথভাবে বিভিন্ন এলাকায় গ্রেফতারের নামে মানুষের বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাংচুর করছে, এমনকি তাদের বিরুদ্ধে লুটপাট, চুরির অভিযোগ উঠেছে। বরিশালের সাবেক এমপি শহিদুল আলমকে বিনা কারণে আটক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বাসায় হানা দিয়ে তাকে না পেয়ে তার বাসা থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে যায়।
বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাবাকে ধরতে গিয়ে না পেয়ে ছেলেকে নিয়ে আসা হচ্ছে। আবার কখনো বাবা ছেলেকে একসাথে নিয়ে আসছে, এই গ্রেফতার তালিকা থেকে বাদ যায়নি উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র এইচএসসি পরীক্ষার্থী সিয়ামুজ্জামান পর্যন্ত। বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের পিএস সুমনের বাসায় রাতে ব্যাপক তল্লাশী চালায় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানা ভুলতা ইউনিয়নের ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম জিসানকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল কাদের জিলানী হিরারকে না পেয়ে তার ছোট ভাইকে, একদিকে স্বজন হারা মায়ের কান্না অপরদিকে কোর্টের বারান্দায় গণগ্রেফতারকৃত পরিবার সদস্যদের বিশেষ করে মা-বোনদের আর্তনাদ, পুলিশের ভ্যান বা ডিবি অফিসে খুঁজে তারা দিশেহারা। তারা বুক ফেটে কাঁদতেও পারছে না পুলিশের অত্যাচারে। জাতিসঙ্ঘ থেকে সারা বিশ্ব এবং দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষরা যখন সরকারের এই গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনকে প্রমাণিত সত্য উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ নিয়ে জানিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ধিক্কার, ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছে, সেই সময়ও সরকার নির্লজ্জের মত মিথ্যাচার করছে।
গণবিচ্ছিন্ন সরকার আজ ইতিহাসের নির্মম ও বর্বর হামলা, গণহত্যা চালিয়ে গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন দমনে নির্বিচার হত্যা মানবতাবিরোধী অপরাধ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারযোগ্য অপরাধ। দিন যতই যাচ্ছে সরকারের অস্তিত্ব সঙ্কট ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। নির্লজ্জ সরকার যতই মিথ্যাচার, সাজানো মামলায় গ্রেফতার অব্যাহত রাখুক না কেনো, কোনো কিছুতেই ছাত্র গণআন্দোলনে দিশেহারা জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী সরকারের পতন ঠেকাতে পারবে না।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, সুশীল সমাজসহ সকল শ্রেণী-পেশার জনগণ যেভাবে সাহসের সাথে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরকারের অন্যায়, অবিচার, গণ হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন। তিনি এর ধারাবাহিকতায় আপামর জনসাধারণের প্রতি আরো ব্যপকভাবে রাজপথে নেমে চলমান ছাত্র-গণআন্দোলনে ব্যপকভাবে সম্পৃক্ত হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করে রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে। সকল অন্যায়, অবিচারের অবসান ঘটানোর আহবান জানান।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে হত্যা, গুম, মিথা মামলায় হয়রানি, গ্রেফতার, দমন, নিপীড়ন বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে
আটককৃত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এবং নিরীহ জনসাধারণের নিঃশর্ত মুক্তি রিমান্ড ও হেফাজতের নামে নির্যাতন বন্ধ, ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদেরকে তাদের অভিভাবকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়াসহ সান্ধ্য আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও অবাধ রাজনীতি উন্মুক্ত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দয়ার দাবি পুনরুল্লেখ করেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com