শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে গাজীপুরের টঙ্গীতে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে অন্তত অর্ধশতাধিক শ্রমিক ও পুলিশ সদস্য আহত হন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উপজেলার ভাদাম এলাকায় ক্রসলাইন লিমিটেড পোশাক কারখানারশ্রমিকরা এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলে এ ঘটনা ঘটে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও কারখানার শ্রমিকরা জানান ভাদাম এলাকায় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সকাল থেকে কারখানা মূলফটকের সামনে বিক্ষোভ করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ ২১ রাউন্ড রাবার বুলেট ৫৮ রাউন্ড শটগান ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের সময় প্রায় অর্ধশতাধিক শ্রমিক ও পুলিশ আহত হন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের এএসআই এমদাদুল হক, মেহেদী, সাব্বির, আশরাফুল, মারুফ তমাল ও আনসার সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন, রেজাউল করিম, মোহাম্মদ আলী মোল্লা আহত হন। আহতদের টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
অপরদিকে টঙ্গীর দাড়াইল এলাকায় এসঅ্যান্ডপি বাংলা লিমিটেড পোশাক কারখানায় হঠাৎ করে কারখানা কর্তৃপক্ষ নোটিশ জারি করেনÍ কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের নামাজপড়া, পাঞ্জাবি দাড়ি ও টুপি পড়ে কারখানায় প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে কারখানার শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ঘটনাস্থলে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও থানা পুলিশ কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশ ইসলামি রাষ্ট্র অনুযায়ী আইন মেনে কারখানার পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হলে শ্রমিকরা শান্ত হয়ে কর্মস্থলে ফিরে যান। এ সময় কারখানায় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার অপরাধ দক্ষিণ ইলতুৎমিস, সহকারী পুলিশ কমিশনার পীযূষ কুমার দে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার এস আলম, টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম। এ বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার এস আলম জানান, ক্রসলাইন লিমিটেড পোশাক কারখানার সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। দুটি কারখানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
১০ সহকর্মীকে ছাঁটাই করায় বিক্ষোভ : ১০ জন সহকর্মীকে চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) ‘ক্রসলাইন নীট ফেব্রিক লিমিটেড’ নামের ওই পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় ভাদাম-টঙ্গী আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের বিক্ষোভ থামাতে ও সড়ক থেকে সরে যেতে পুলিশ অনুরোধ জানায়। এক পর্যায়ে শ্রমিক-পুলিশ বাগবিত-ায় জড়িয়ে পড়ে। এ সময় শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও শ্রমিকরা জানান, গত কয়েকদিন ধরে বিনা কারণে টঙ্গীর ভাদাম এলাকার ‘ক্রসলাইন নীট ফেব্রিক লিমিটেড’ কারখানার ১০ শ্রমিককে ছাঁটাই করে কর্তৃপক্ষ। তাদের কাজে ফিরিয়ে আনার দাবিতে সহকর্মী শ্রমিকরা গত তিন দিন ধরে কারখানা অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করে আসছিলেন। বৃহস্পতিবার ওই দাবির প্রেক্ষিতে উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকরা কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এতে ভাদাম-টঙ্গী সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) সিদ্দিকুর রহমান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শিল্প, মেট্রোপলিটন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কমপক্ষে ৬০ রাউন্ড টিয়ারশেল এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। শ্রমিকদের ইটপাটকেলে পুলিশের ছয় এবং আনসার বাহিনীর তিন সদস্য আহত হন। তাদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তবে শ্রমিক আহতের কোনও ঘটনা নেই বলে দাবি করেন তিনি। ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা ছুটি ঘোষণা করেন। শ্রমিকরা দাবি করেন, পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে কমপক্ষে ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদেরকে বিভিন্ন ওষুধের দোকানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তার মোবাইলফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।