সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। গতকাল ১৫ ডিসেম্বর সেখানে পৌঁছে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তিনি। এরপর দর্শনার্থী খাতায় নিজের অনুভূতি লিখেছেন। সবশেষে একটি গাছের চারা রোপণ করেন। ভারতীয় কূটনীতিক অরিন্দম বাগচী টুইটারে জানান– দর্শনার্থী খাতায় ভারতের রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের চেতনা আমাদের চিন্তা ও কর্মে অব্যাহত থাকুক।’
স্মৃতিসৌধে রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষের সমাপনী দিন উদযাপন এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আজ ঢাকায় এসেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। তাকে বহনকারী এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান উড়োজাহাজটি সকাল সাড়ে ৯টায় দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা দিয়ে সকাল ১১টা ১০ মিনিটে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও তার স্ত্রী রাশিদা হামিদ। বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার পাওয়ার পর লালগালিচায় পা মাড়িয়েছেন রামনাথ কোবিন্দ। তখন আবহসংগীত হিসেবে বেজেছে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ গানের সুর। ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গী হয়েছেন তার সহধর্মিণী সবিতা কোবিন্দ ও কন্যা, ভারতের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, দুই জন সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
করোনা মহামারির পর এটাই রামনাথ কোবিন্দের প্রথম বিদেশ সফর। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম বাংলাদেশ সফর। এ বছরের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করেন। একই বছরে দেশটির রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ ভ্রমণ এটাই প্রথম। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁওয়ের হেলিপ্যাডে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি। হেলিকপ্টারে চড়ে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন তিনি। এরপর আবারও হেলিপ্যাডে করে তেজগাঁও ফিরেছেন তিনি।
ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রপতির পরবর্তী সফরসূচি : গতকাল বুধবার দুপুরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ। পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত একটি টি-৫৫ ট্যাংক এবং একটি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনের জন্য রাষ্ট্রপতিকে উপহার দেন ভারতের রাষ্ট্রপতি।
আজ ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের বিজয় দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে ‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে অংশ নেবেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্তে ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ অনুষ্ঠানে দেখা যাবে তাকে। এখানে আরও থাকবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সফরের তৃতীয় দিন ১৭ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি ঢাকার রমনাস্থ কালীমন্দিরের সংস্কারকৃত অংশ উদ্বোধন ও মন্দির পরিদর্শন করবেন। মন্দির সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মতবিনিময়ের আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি। রাষ্ট্রীয় সফর শেষে আগামী শনিবার দুপুরে দিল্লি ফেরার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন রামনাথ কোবিন্দ।