চলনবিলে ভাসমান খামারে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে হাঁস। এখানে ছোট বড় প্রায় ৪৫১টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে রাজহাঁসের খামার অর্ধেক। এসব খামারে হাঁস আছে দেড় লাখেরও বেশি। এ ছাড়া স্থানীয় বাড়িতে বাড়িতে প্রায় ৭-৮ লাখ হাঁস পালন হচ্ছে। এতে বেকারত্ব কমার পাশাপাশি বেড়েছে আয়। পূরণ হচ্ছে স্থানীয় আমিষের চাহিদাও।
এক সময় বর্ষাকালে বানের পানি এলে জাল বুনন আর মাছ ধরার ধুম পড়ে যেত চলনবিল এলাকার মানুষের মধ্যে। তবে নানা কারণে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না চলনবিলে। তাই এখানকার অনেকেই বেকার হয়ে পড়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে কাটছে অভাবের জীবন। অনেকে বিলে হাঁস পালনের মতো লাভজনক পেশায় জড়িত হচ্ছে। ফলে সংসারে ফিরে এসেছে সচ্ছলতা।
চলনবিলে হাঁস পালনের সব থেকে বড় সুবিধা বিলে পানি থাকা অবধি প্রায় ছয় মাস হাঁসের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় শামুক, ঝিনুকসহ নানা পানীয় প্রাণী। এতে হাঁস পালনে খরচ কম হচ্ছে। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে বছরের পুরো সময় অস্থায়ী খামার গড়ে হাঁস পালন করে জীবিকা নির্বাহ করছে অনেকে।
মূলত হাঁসের ডিম বিক্রি করেই মিটছে সংসারের খরচপাতি। চলছে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা। কমছে ঋণের বোঝাও। প্রাণিসম্পদ অফিসের তথ্য মতে চলনবিলে ছোট বড় প্রায় ৪৫১টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে রাজহাঁসের খামার অর্ধেক। হাঁস পালনকারীরা পাতিহাঁস এবং রাজহাঁস উভয় প্রকারের হাঁস পালন করে গোশত ও ডিমের চাহিদা পূরণ করে। এসব খামারে হাঁস আছে দেড় লাখেরও বেশি। আবার স্থানীয় পরিবারগুলোও পালন করছে প্রায় ৭-৮ লাখ হাঁস। এতে বেকারত্ব কমার পাশাপাশি বেড়েছে আয়। পূরণ হচ্ছে স্থানীয়দের আমিষের চাহিদাও।
চলনবিলের খামারি হাসমত আলী জানান, তিনি ৩০০টি হাঁস পালন করেন। সকালে হাঁসগুলো বিলে চলে যায়। সারা দিন শামুক-ঝিনুক খায়। তিনি নিজেও কিছু খাবার দেন। আরেক খামারি আজগর আলী বলেন, সারা বছরই হাঁস পালন করি। খামারে ক্যাম্বেল জাতের ৬০০টি হাঁস রয়েছে। খামারের ৫০০টি হাঁস ডিম দিচ্ছে। নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, জেলার প্রতিটি খামারেই অন্তত ৩-৪ জন কাজ করছে। খামারগুলোতে প্রায় এক লাখ ৫৭ হাজার হাঁস পালন করা হচ্ছে। বছরে একেক খামারির লক্ষাধিক টাকা আয় হয়। এ খাতে আরো মানুষকে সংযুক্ত করার কাজ করে যাচ্ছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।