মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৫:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন ৫ টাকার নোটে মুদ্রিত নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ ভালুকায় কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ মেলান্দহে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান:চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন জলঢাকায় কৃষকদের ফসলি জমির ধান নষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র নেই তবুও চলছে ইট ভাটা ভোটারদের আস্থা চেয়ারম্যান প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম মুইদুল ইসলামের উপর কালীগঞ্জে ৪ কোটি টাকার রাস্তায় নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ খাদ্য ও শস্য পণ্য উৎপাদন বাড়াতে পারলে,দেশের আর্থিক অগ্রগতি বাড়বে-এস এম শাহজাদা এমপি আবারও ‘আওয়ামী লীগের সাজানো বিষ্ফোরক মামলায়’ পিরোজপুর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সহ যুগ্ম আহ্বায়ক-১ কারাগারে জগন্নাথপুরে মাদ্রাসার ফলাফল সন্তোষজনক জমে উঠছে পিরোজপুরে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা

মিরসরাইয়ে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের কারিগররা ভালো নেই

কামরুল ইসলাম (মিরসরাই) চট্টগ্রাম:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের মৃৎশিল্পীরা ভালো নেই। এ উপজেলার ছত্তরুয়া গ্রামের মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্য আঁকড়ে থাকা পাল বংশের লোকদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি দেশের রয়েছে নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতি। একেকটি শিল্পের বিস্তারের পেছনে রয়েছে দেশ বা জাতির অবদান। আমাদের দেশের অন্যতম শিল্প হচ্ছে মৃৎশিল্প। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে মৃৎশিল্পের সম্পর্ক অনেক গভীর। মাটির তৈরি তৈজসপত্রের সঙ্গে বাঙালির অস্থিত্ব জড়িয়ে। হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলে মৃৎশিল্প গড়ে উঠেছে। একসময় অন্যতম বড় এই শিল্প এখন মৃতপ্রায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামের ৪০-৫০ পরিবারের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ এই পেশার সাথে জড়িত। কিন্তু অতীতে আরো অনেক পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। স্বাধীনতার পূর্বে থেকে বংশানুক্রমে এখানে এই শিল্প গড়ে উঠেছিল কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ অনেকটা হারিয়ে যেতে বসেছে এই শিল্প। এখানকার উৎপাদিত মাটির তৈজসপত্র রামগড়, খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা, ফেনী, সোনাগাজী সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা হয়। ছয়মাস ধরে তারা মৃৎশিল্প তৈরি করে আর ছয়মাস বিভিন্ন কায়দায় বিক্রি করেন। কয়েকজন মৃৎশিল্পী আক্ষেপ করে বলেন, একটি পিঠা তৈরির ছাঁচ (খোলা) তৈরি করতে প্রথমে মাটি সংগ্রহ করি, তারপর মাটি তৈরি করে ছাঁচে রুপ দিই, ৭-৮ দিন রোদে শুকাই, এরপর ৮-১০ ঘন্টা আগুনে পুড়িয়ে তারপর বিক্রয় উপযোগী করি। অথচ এত কষ্টের সে কাঙ্খিত লাভ হয় না। একটি খোলা তৈরিতে মাটি ও পোড়ানো বাবদ প্রায় ৫ টাকা খরচ হলেও তা বাজারে বিক্রি হয় ১০ টাকা। এর মধ্যেই রয়েছে শ্রম ও মাল বহনের খরচ। ফলে লাভের মুখ তারা দেখে না। অথচ ঐ একটি খোলা এক হাত ঘুরে বাজারে খুচরা ক্রেতা কিনছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। ফলে সহজেই অনুমেয় মূল মুনাফা চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মৃৎশিল্পীরা এ পেশার প্রতি হতাশ। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্যের কারণেই মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখা দরকার বলে মনে করেন এই গ্রামের প্রবীণ মৃৎশিল্পীরা। এছাড়া মৃৎশিল্প’র উপকরণও তাদের জন্য সহজলভ্য করা উচিত। মাটির তৈরি কলসি, ফুলের টব, সরা, বাসন, সাজের হাঁড়ি, মাটির ব্যাংক, পিঠা তৈরির ছাঁচ, পেয়ালা, শিশুদের বিভিন্ন খেলনাসমগ্রী নানা ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করেন কুমারেরা। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস, খড় ও বালি। পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কুমারদের। সরকার মাটি কাটা বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকায় তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী মাটি পাচ্ছে না। আর পেলেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এই মাটি। মিরসরাই উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের নিপেন্দ্র চন্দ্র মাস্টার বাড়ির রাখাল চন্দ্র পাল জানান, ব্যবসা মন্দার কারণে আমাদের এখাকার মৃৎ শিল্প প্রস্তুতকারী বাপ-দাদার এই পেশা ধরে রেখেছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার। এই সামান্য আয়ে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে বলে অভিযোগ করেন এই কুমার। তিনি বলেন, ব্যবসা না থাকায় অনেকে এখন অন্য কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। কাজেই এ মৃৎশিল্প ধরে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। গৃহবধূ শিউলি রানী পাল বলেন, আমরা গৃহস্থালির কাজের পাশাপাশি পরিবার চালাতে এই পেশার সাথে নিজেদেরকে জড়িয়ে রেখেছি। কিন্তু আমাদের শ্রম অনুযায়ী সে লাভ পাই না। আমাদের বর্তমান প্রজন্ম এই পেশার সাথে থাকলেও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই পেশার সাথে থাকে কিনা সন্দেহ আছে। করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, স্বাধীনতা-পূর্ব থেকে আমার ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত এই পাল গ্রামে অনেক পরিবার মাটি দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করে আসছে। সরকার মাটি কাটা বন্ধে কঠোর অবস্থানে থাকায় তারা তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান মাটি সংগ্রহ করতে পারছে না। এই শিল্প বাঁচিয়ে রাখতে যাতে প্রশাসন কিছুটা ছাড় দেয় সে ব্যাপারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আমাদের আদি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সবার এগিয়ে আসা উচিৎ। ইতোমধ্যে আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। তাদের সমস্যার কথা শুনেছি। স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আশ্বস্ত করেছি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com