বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

আজ শনিবার সিলেট বিভাগে বিএনপির গণসমাবেশ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২

আজ শনিবার সিলেট বিভাগে বিএনপির গণসমাবেশ। নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার, বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তিদাবি এবং নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার সিলেট বিভাগের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে ইতোমধ্যেই নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে এবার সুনামগঞ্জে দু’দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। পরিবহন ধর্মঘটকে উপেক্ষা করে ট্রলার-নৌকা-লঞ্চে করে সমাবেশস্থলে আসা শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা। মালিক সমিতির জানায়, সড়কে অবৈধ সিএনজি-ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের দাবিতে ১৮ ও ১৯ নভেম্বর সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাতে সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোজ্জামেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের লামাকাজী এলাকার এম এ খান সেতুর টোল আদায় বন্ধ, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও পরীক্ষামূলক (অন টেস্ট) সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ, সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনাল সংস্কার ও আধুনিকায়ন-এই চার দফা দাবিতে তারা আগে থেকেই আন্দোলন করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। বিএনপির সমাবেশের সাথে বাস ধর্মঘটের কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি দাবি করেন। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এসব ধর্মঘটের উদ্দেশ্য আমাদের সমাবেশে যেতে বাধা দেয়া। দেশের অন্যান্য বিভাগেও এসব করা হয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমাদের কোনোভাবেই আটকানো যাবে না। নেতা-কর্মীদের অনেকেই সিলেটে পৌঁছে গেছেন ’তিনি বলেন, বাস বন্ধ থাকলে নেতাকর্মীরা লঞ্চে অথবা প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটে গিয়ে সমাবেশে যোগ দেবেন। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোকে সামনে রেখে অন্যান্য স্থানেও পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় মালিক সমিতি। বিএনপির দাবি, মূলত সরকারের ইন্ধনে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তবে এভাবে গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ঠেকানো যাবে না বলেও জানান তারা।
এদিকে ধর্মঘটের আশঙ্কায় সমাবেশের তিন দিন আগে থেকেই লোকসমাগম হওয়া শুরু হয়েছে সিলেট আলিয়া মাঠে। ধর্মঘটের খবর পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা নৌপথে ট্রলার-নৌকা-লঞ্চে করে সিলেট গণসমাবেশ আসছেন। আজ ১৯ নভেম্বর সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মালিক সমিতি।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন সমাবেশে পরিবহন ধর্মঘট দেয়া হয়েছিল। সিলেটেও ঠিক একই কায়দায় করা হচ্ছে। মূলত সরকারের ইশারায় এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। এভাবে গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি ঠেকানো যাবে না বলেও জানান তারা।
এ দিকে সিলেট বিভাগে ধর্মঘট ডেকেছে বিভিন্ন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সমিতি। মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন মালিক সমিতি। এ ছাড়া হবিগঞ্জে আজ শুক্রবার সকাল থেকে জেলা মোটর মালিক গ্রুপের আওতাধীন সব যান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, মহাসমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতেই সরকারি দলের ইন্ধনে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তবে বিএনপি নেতারা মহাসমাবেশ সফল করতে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে জানিয়েছেন, সব বাধা উপেক্ষা করেই এ গণসমাবেশেও মানুষের ঢল নামবে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে বাস মালিক সমিতির নেতারা দাবি করেছেন পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা এ ধর্মঘট ডেকেছেন। তবে এই ধর্মঘটে গণসমাবেশ দমে যাবেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। সব বাধা উপেক্ষা করে গণসমাবেশ সফল করার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে বিএনপি।
জানা যায়, শুধুমাত্র সিলেট জেলায় ধর্মীয় সংগঠন ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর ইজতেমার কারণে কাল ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছে। আর মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে দুই দিনের অর্থাৎ আজ ও কাল ধর্মঘট আহ্বান করেছে মালিক সমিতি। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ইজতেমার দিন কোনো ধর্মঘট পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম জানান, ধর্মঘটের সাথে বিএনপির সমাবেশের কোনো সম্পর্ক নেই। সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: মঈনুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে জানান, কোনো রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করার বিপক্ষে তারা।
পরিবহন মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশের দুই দিন আগ থেকে ধর্মঘট ডাকার জন্য মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ওপর চাপ ছিল। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও সিলেটের নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে তিন দিনের ধর্মঘট ডাকার অনুরোধ করেন। তবে সিলেটের মালিক ও শ্রমিক নেতারা ধর্মঘটের পক্ষে ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিকপক্ষ কেবল সমাবেশের দিন ধর্মঘট ডেকেছে বলে জানিয়েছে এই সূত্র। মৌলভীবাজারে ডাকা হয়েছে দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘট। জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির এ ধর্মঘটে বন্ধ থাকবে সব ধরনের যানবাহন। বুধবার রাতে এই ঘোষণা দেন মৌলভীবাজার বাস মিনিবাস মালিক সমিতির চেয়ারম্যান রশিদ উদ্দিন আহমদ।
এ দিকে গত বৃহস্পতিবার সকালে সুনামগঞ্জ-সিলেট রুটে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, আজ ও কাল সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। অপর দিকে হবিগঞ্জে আজ সকাল থেকে জেলা মোটর মালিক গ্রুপের আওতাধীন সব বাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই সরকার চাপ দিয়ে ধর্মঘট আহ্বান করিয়েছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই গণজমায়েতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার নিশারুল আরিফ বলেন, কালকের সমাবেশকে ঘিরে সিলেটে যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পুলিশ বরাবরের মতোই পদক্ষেপ নিবে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে একটি সূত্র জানান, সিলেটে বিএনপির সমাবেশে লংমার্চ করে যাওয়ার জন্য কয়েক শ’ নেতাকর্মী গতকাল ব্যানার, প্ল্যাকার্ড ও টিশার্ট পরে কুলাউড়া বিএনপির অফিসে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজার আহবানে। কিন্তু পুলিশ বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ করে রাখে এবং বিভিন্ন নেতাকর্মীর বাড়িতে তল্লাশি চালায় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। পুলিশের মারমুখী আচরণে এবং প্রায় পাঁচ ঘণ্টা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখায় লংমার্চ স্থগিত করে নিজ নিজ উদ্যোগে সিলেটের সমাবেশে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে জানান আবেদ রাজা। দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আবেদ রাজা বলেন, বিএনপি উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভার নেতাকর্মীদের আগামীকাল সিলেটের সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং ব্যাপক সাড়া মিলে। গতকাল লংমার্চ করে সিলেটে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ উপজেলা সভাপতি জয়নাল আবেদিন বাচ্ছুকে আটক করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল, শ্রমিকদল সভাপতি সিরাজ উদ্দিন বুলু, ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক কামরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আব্দুর রহমান, উপজেলা বিএনপির মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যাজ বিক্রি করতে শরীয়তপুরের মামুন সিলেটে : গণসমাবেশ সামনে রেখে আশপাশ এলাকায় চলছে সাজ সাজ রব। বিএনপির নেতারা আশা করছেন, এ গণসমাবেশে চার লাখ লোকের সমাগম ঘটবে। এর আগেই সমাবেশস্থলে বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সেখানে বিএনপির লোগো ও ধানের শীষের প্রতীকসংবলিত ব্যাজ, কোট পিন ও মাথায় বাঁধার ফিতা বিক্রি করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন কয়েক তরুণ।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে এসেছেন মামুন খান। সমাবেশস্থলের মূল প্রবেশপথের কাছে বিএনপির ব্যাজের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন তিনি।
শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে কোট পিন, ব্যাজ ও ফিতা নিয়ে এসেছেন মামুন খান। এর আগে তিনি ফরিদপুর, খুলনা, বরিশালসহ বিএনপির অন্যান্য গণসমাবেশ স্থলে গিয়ে পণ্যগুলো বিক্রি করেছেন। এসব পণ্য ঢাকা থেকে সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন তিনি। বিকেলে আলিয়া মাদরাসা মাঠে কথা হয় তার সাথে।
মামুন খান বলেন, ফরিদপুরে ৩০ হাজার টাকার মতো বেচাবিক্রি হয়েছে। সিলেটেও ভালো বিক্রি করতে পারবেন বলে তার আশা। কোট পিনগুলো ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। মাথায় বাঁধার ফিতা ১০ টাকা করে বিক্রি করছেন। গত বুধবার সিলেটে এসেছেন তিনি। এক দিনে তিনি প্রায় এক হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছেন।
মানিকগঞ্জ থেকে কোট পিন নিয়ে আসা মো: উজ্জ্বল বলেন, তিনি নিজে বিএনপির সমর্থক। মূলত সমাবেশে যোগ দিতেই তিনি এসেছেন। সেই সাথে ঢাকা থেকে কিছু সামগ্রী এনেছিলেন। সেগুলো পাইকারি দামে বিক্রি করছেন। সমাবেশের মাঠে কোট পিন ও মাথায় বাঁধার ফিতা কিনছিলেন যুবদল নেতা সাবের রহমান। তিনি বলেন, সমাবেশ স্থল ছাড়া এগুলো পাওয়া যায় না। তাই তিনি কিনে নিচ্ছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com