সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ অপরাহ্ন

দাম কম পাওয়ায় কষ্টে খাসিয়া পানচাষিরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২

দাম কম পাওয়ায় অর্থকষ্টে পড়েছেন খাসিয়া (খাসি) পানচাষিরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রায় অর্ধেক দামে পান বিক্রি করতে হয়েছে তাঁদের। অনেক বছর ধরে ভরা মৌসুমেও পানের মূল্য এতটা কম হয়নি। এতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে হিমশিম খেতে হচ্ছে খাসিয়া পানচাষিদের। অন্তত ২০ বছর আগে থেকেই জুন-জুলাই মাসে খাসিয়া পানের কুড়ি বিক্রি হয়েছে হাজার টাকায়। এবার (২০২২) একই সময়ে এক কুড়ি পান বিক্রি হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। পানের উৎপাদন খরচ ও জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধির এই সময়ে পানের যথার্থ দাম না পাওয়ায় পানচাষিরা হতাশ, উদ্বিগ্ন। খাসি নেতা, পানচাষি ও পান ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারে ছোটবড় ৬৫টি খাসিয়া পুঞ্জি (ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গ্রাম) আছে। পুঞ্জির প্রায় ২৫ হাজার লোকের জীবিকার প্রধান উৎস হচ্ছে খাসিয়া পান চাষ। পান চাষ ও বিক্রি ব্যাহত হলে তাঁরা আর্থিক সংকটে পড়েন। এবার উৎপাদন ভালো হলেও পানের যথার্থ দাম পাননি চাষিরা। করোনার বছরগুলোতেও জুন-জুলাই মাসে এক কুড়ি পান বিক্রি হয়েছে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়। ২০০০ সালেও এক কুড়ি পান বেচে চাষিরা পেয়েছেন হাজার টাকা। কিন্তু এবার একই সময়ে এক কুড়ি পান বিক্রি হয়েছে গড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ১৪৪টি পানে এক কান্দা। ২০ কান্দায় এক কুড়ি। এখন উৎপাদন খরচ, নিত্যপণ্যসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু খাসিয়া পানের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। পানচাষিরা উৎপাদিত পানের সঠিক দাম পাননি। এতে জীবনধারণই কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁদের।
লাউয়াছড়া পুঞ্জির একটি পানজুমের (পানখেত) মালিক পানচাষি সাজু মারচিয়াং গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার জুন থেকে প্রায় অক্টোবর মাস পর্যন্ত পানের কুড়ি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। গত বছর একই সময়ে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। এখন (নভেম্বর থেকে) পানের দাম কিছু বাড়ছে। ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কুড়ি। কিন্তু এখনতো শীতকাল, মৌসুম শেষ। পান নাই। অনেক কষ্ট করে চলতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকারি ঋণ পাওয়ারও সুযোগ নেই। অনেকেই মহাজনের কাছে ঋণে আবদ্ধ হচ্ছেন। মহাজনকে পানের মৌসুমে বাজার মূল্য থেকে ২০০-৩০০ টাকা কমে কুড়ি দিতে হবে।’
এদিকে পানের দাম কমায় গত অক্টোবর মাসে পুঞ্জির মান্ত্রীরা (পুঞ্জিপ্রধান) কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজারে মতবিনিময় সভা করেন। সভায় অনেকগুলো কারণকে যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন তাঁরা। কারণের মধ্যে মনে করছেন খাসিয়া পানের জায়গায় বাংলা পানের বিক্রি বৃদ্ধি, আড়তদারদের সিন্ডিকেট, জাফলং ও গোয়াইনঘাটের সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় খাসিয়া পানের অনুপ্রবেশ, খাসিয়া পান বিদেশে রপ্তানি না হওয়া ইত্যাদি। এই সংকট থেকে উত্তরণে আগামী জানুয়ারি থেকে পান বিক্রির প্রথাগত পদ্ধতির আড়তের উপর নির্ভর না করে নিজেদের মধ্য থেকে খাসিয়া পানের ব্যবসায়ী ও আড়তদার তৈরি করার কথা ভাবা হচ্ছে। বর্তমানে আগের থেকে পানের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু উৎপাদন কমে গেছে। ভরা মৌসুমে একজন চাষি যেখানে দুই কুড়ি পান পেতেন। এখন পান এক কুড়ি। খাসিয়া পানের পাইকার রাখাল বৈদ্য সম্প্রতি বলেন, ‘কাঁচামালের গ্যারান্টি নেই। দাম কোনো সময় বাড়ে, কোনো সময় কমে। এটা দেশের অর্থনীতির ওপরও নির্ভর করে। কোনো সময় লাভ অয় (হয়)। কোনো সময় লস।’
শ্রীমঙ্গলের পানের আড়তদার আরব আলী সম্প্রতি বলেন, ‘পানের খাওয়া কমেছে, ফসলও ভালো হওয়ায় আমদানি বেশি। এজন্য এবার তাঁরা (চাষিরা) দাম (প্রকৃত মূল্য) পাইছেন না।’ পানচাষি, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সভাপতি এবং মাগুরছড়া পুঞ্জির মান্ত্রী জিডিশন প্রধান সুচিয়াং সম্প্রতি বলেন, ‘দাম না মেলার কারণগুলো জানার চেষ্টা করছি। জানুয়ারি থেকে নিজেরা ব্যবসা, আড়তের চিন্তা করছি। পানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু কম দামের কারণে গোবর-সার কেনা সম্ভব হয়নি। সার না দেওয়ায় সামনের বছর উৎপাদন কেমন হবে, বলা মুশকিল। পুঞ্জির ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দরকার। রেশন, নয়তো বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া দরকার।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com