শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৪ পূর্বাহ্ন

বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৪

বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ। আজ ১ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় ঢাকাসহ সারাদেশের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ ১ সেপ্টেম্বর রোজ রোববার বেলা ১১টায় মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মাজারে দলের মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। বাদ যোহর দলীয় কার্যালয়ের সামনে বন্যায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা, সম্প্রতি ছাত্রজনতার আন্দোলনে শহীদ নেতাকর্মীদের আত্মার মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফেরাত কামনা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুরুপভাবে সারাদেশে বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হবে।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন।
বিএনপির ঘোষণাপত্র: প্রায় ২৮টি বিষয়কে জাতীয় উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য নির্ধারণ করে বিএনপি তার ঘোষণাপত্র আজ থেকে ৩৪ বছর আগে নির্ধারন করে যা আমাদের ধারাবাহিক উন্নয়নে ঐতিহাসিকভাবে গুরুবহ। ১. বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে অনুপ্রানিত ও সংহত ইস্পাত কাঠন ঐক্য ২. উৎপাদনের রাজনীতি ৩. জনগণের গনতন্ত্র ও রাজনীতি ৪. রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ৫. সামাজিক অন্যায় ও বৈষম্যের দূরীকরণ ৬. সার্বভোমত্ব, সামাজিক ন্যায় বিচার ও দ্রুত উন্নয়ন ৭. মৌলিক অধিকার, বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন ৮. বিলুপ্ত মানবিক মূল্যবোধের পুণরুজ্জীবন ৯.স্থানীয় এলাকা সরকার ও বিকেন্দ্রীভূত রাজনৈতিক ক্ষমতা ১০. সামাজিক ন্যায় বিচারের অর্থনীতি ১১. জনসম্পদের সার্বিক উন্নয়ন ও সদ্বব্যবহার ১২. নারীর সার্বিক মুক্তি ও প্রগতি ১৩. জাতিগঠন সমাজসেবা ও যুবশক্তির ব্যবহার ১৪. পল্লী উন্নয়ন ১৫. গণমুখী কৃষিনীতি ১৬. সমবায় ভিত্তিতে জাতীয় উন্নয়ন ১৭. সৃজনশীল, উৎপাদনমুখী এবং গনতান্ত্রিক শ্রমনীতি ১৮. জীবনমান উন্নয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ১৯. গনমুখী ও জীবননির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম ২০. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ২১. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্বব্যবহার ২২. অনুন্নত এলকা ও জনগোষ্ঠির উন্নয়ন ২৩. সার্বভৌমত্ব সুনিশ্চিত রক্ষাকবচ হবে সশস্ত্রবাহিনী ২৪. জাতীয় প্রগতি ও সমৃদ্ধি অর্জনে মুক্তিযোদ্ধা ২৫. বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষণ উন্নয়ন ও প্রসার ২৬. বাংলাদেশী সাহিত্য সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ ২৭. ধর্মীয় শিক্ষা ২৮. জাতীয় পররাষ্ট্রনীতি হবে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, সমৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক প্রীতি ও সখ্যতা।
১৯৭৯ ফেব্রুয়ারী সাধারন নির্বাচন: বিএনপি ৩০০ আসনের মধ্যে ২২০টি আসন লাভ করে। সাধারন নির্বাচনের পর দেশ থেকে সামরিক আইন ও জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করা হয়। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ১৯দফা কর্মসূচী ঘোষনা করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের ডাক দেন। ১৯৮১ সালের ৩০মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সুবহা সাদিকের সময় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কুচক্রী সেনাসদস্য কতৃর্ক শহীদ হন।
১৯৮২, ৩ জানুয়ারি: ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারী একজন সাধারন গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৮ জানুয়ারি সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি শোসনহীন, দুর্নীতিমুক্ত, আত্মনির্ভশীল দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেছিলেন। বিগত কিছু কাল যাবৎ আমি বিএনপি কার্যক্রম গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। দলের ঐক্য ও সংহতি বিপন্ন হতে পারে, এমন মনে করে আমাকে দলের দায়িত্ব নেবার অনুরোধ করা হয়েছে। তাই দলের বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপিতে যোগ দিয়েছি ও দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছি। দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং শহীদ জিয়ার গড়া দলে ঐক্য ও সংহতির স্বার্থে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাওয়া আমার লক্ষ্য।’

১৯৮৩, ১লা এপ্রিল: এই দিনে বিএনপির বর্ধিত সাধারন সভা থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান পদে আসীন করা হয়।
আগষ্ট ১৯৮৪: বেগম খালেদা জিয়া বিনা প্রতিদন্দ্বিতায় চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন এবং বিএনপিতে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। নেতা-কর্মীরা নতুন আশার আলোয় আবারো রাজপথে নেমে আসে। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নানাবিধ হুমকি আসতে থাকে, চক্রান্ত চলতে থাকে তাকে ব্যর্থ করে দেবার। কিন্তু অকুতোভয়, সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও গনতন্ত্রের পথে পথ চলতে আপসহীন ভূমিকা নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া।
১৯৮৬ সাধারন নির্বাচন: বিএনপি ১৯৮৬ সালের সাধারন নির্বাচন বয়কট করে। এ নির্বাচন আওয়ামী লীগেরও বয়কট করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগ এ প্রহসনের নির্বাচনে অংশ নেয় ও জাতীয় বেঈমান খেতাব প্রাপ্ত হয়।
১৯৯০ স্বৈরাচারের পতন: এরপর আরো ৫ বছর স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে একলা পথ চলেন বেগম খালেদা জিয়া। এ সময়ে আন্দোলন করে অসহনীয় জুলুম নির্যাতন সহ্য করেন এবং ‘গণআন্দোলন’ সংগঠিত করেন। ১৯৯০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে সরকার পতনের একদফা আন্দোলনের ডাকে দেশের মানুষ রাজপথে নেমে আসে। ফলে এরশাদ ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। বেগম খালেদা জিয়ার গনআন্দোলন সফল হয়। ফিরে আসে গনতন্ত্র। বেগম জিয়ার আপোসহীন নেতৃত্বের কারণে দেশবাসীর মাঝে ব্যাপক তার জনপ্রিয়তা তৈরী হয় এবং ‘দেশনেত্রী’ অ্যাখ্যায়িত হন।
১৯৯১ সাধারন নির্বাচন: বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেতৃত্বে গনতন্ত্রের বিজয়ে ফলে এ সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে একক ভাবে সরকার গঠন করে ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কিন্তু তৎকালিন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা সরকারকে একদিনও শান্তিতে থাকতে দেবে না বলে সংসদে সরকারকে হুশিয়ারী দিয়ে সরকারের মেয়াদের ৫ বছরে শতাধিক হরতাল ও অসহযোগের মাধ্যমে নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করে।
১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৬ সাধারন নির্বাচন:সংবিধান রক্ষার জন্য ১৯৯৬ সালে বিএনপি নির্বাচন হয়। সংবিধানে সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করতে এবং সাধারন নির্বাচন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতেই ১৯৯৬ সালের নির্বাচন করা হয়। এ নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ছিল শুধু সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্ববধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
১২জুন ১৯৯৬, সাধারন নির্বাচন: প্রধান বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পায়। বিরোধী দল হয়েও সরকারকে সর্বাতœক সহযোগিতা করে বিএনপি মানুষের কাছে আবারো নতুন পথের সন্ধান দেয়।
১লা অক্টোবর ২০০১, সাধারন নির্বাচন: নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি ৩য় বারের মতো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে নির্বাচিত হয় এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ৩য় বারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১লা নভেম্বর ২০০৬:বিএনপি সরকার ২৮ অক্টোবর মেয়াদ শেষে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠার সন্ত্রাসের নৈরাজ্য ও মানুষ হত্যায় সামরিক বাহিনী সমর্থিত মঈন-ফখরুদ্দীনের অবৈধ সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। বিএনপিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ষড়যন্ত্র হয়েছিল এই অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। এজন্য তারা দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে। আটক করে তার দুই ছেলেকে। গ্রেফতার থেকে বাদ যায়নি দলের সিনিয়র নেতারাও। তারা বিএনপিকে দুইভাগে বিভক্ত করে সংস্কার ইস্যুকে কেন্দ্র করে। দল প্রায় দু ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেয়ে আবারও দলকে সুসংগঠিত করে তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। দলের প্রতিটি নেতাকর্মীর প্রত্যয়দীপ্ত বলিষ্ঠ প্রতিরোধের মুখে ও গনতন্ত্রের আপোষহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সুদৃঢ় নেতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদী শক্তির কাছে নতজানু হয়ে তারা পরিশেষে সাধারন নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়।
২৯ ডিসেম্বর ২০০৯, সাধারন নির্বাচন:দীর্ঘ ২ বছর সামরিক বাহিনীর সমর্থিত অবৈধ সরকারের অধীনে কারচুপির সাধারন নির্বাচনে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে মেনে নিতে বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসে। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিরোধ, নিরাপত্তাসহ প্রায় ১৩টি জনদাবি আদায়, জাতীয় স্বার্থ বিরোধী চুক্তি ও সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদ, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দমন নীতি, হত্যা, সন্ত্রাস, গুম, মামলা, হামলার প্রতিবাদে এবং সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সংসদ থেকে রাজপথে নেমেছে বিএনপি।
এ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এমন সময় এল যখন বাংলাদেশের দুর্দিন। একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এর অস্তিত্ব নানামুখী ষড়যন্ত্র ও হুমকির সম্মুখীন। যখন পুরো দেশ ও জাতি এক চরম হতাশায় নিমজ্জিত, দিশেহারা, চরম সংকটে পতিত। একটি বিপজ্জনক আধিপত্যবাদী শক্তি যে দেশের প্রতিবেশী এবং একটি এককেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যব¯’ার কবলে যে দেশ নিপতিত, সেই দেশের সার্বভৌম অস্তিত্ব রক্ষা এবং জনগণের ন্যায্য গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণ এক মরণপণ সংগ্রামের ব্যাপার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সব নেতা ও কর্মীকে কঠিন এই ঐতিহাসিক দায়িত্বের গুর“ত্ব উপলব্ধি করতে হবে, যখন দল ও দেশের সম্ভাবনাময় নেতা জিয়া পরিবারের কনিষ্ঠ পুত্র তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কার্যত বন্দী করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ছাড়া দেশে এমন আর কোনো রাজনৈতিক শক্তি নেই জাতির এই চরম দুর্দিনে জাতিকে পথ দেখাতে পারে। তারপরেও দেশের আপামর জনসাধারণ মনে করেন, ভারতীয় তাঁবেদার এই শাসকগোষ্ঠীর শৃংখল ভেঙ্গে তারেক রহমান আবার বীরের বেশে দেশে ফিরে এসে তার আপসহীন মায়ের সাথে মুক্তির আন্দোলনে শরিক হবেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com