‘কখনো একা হাঁটবে না’ – ক্লাবটির মূলমন্ত্র। প্রতি ম্যাচের আগে-পরে, কিংবা কঠিন সময়ে লিভারপুলের সমর্থকদের কণ্ঠে বিশ্বাস হয়েও ঝরে গানটার সুর। কিন্তু সেই লিভারপুলই দুই দিন আগে এই বিশ্বাসকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়ার মতো এক কাজ করে বসে।
আরেক ইংলিশ ক্লাব টটেনহামের দেখাদেখি সরকারের ঘোষিত পদ্ধতির সুবিধা নিতে খেলার বাইরের কর্মীদের সাময়িক ছুটি দিয়েছিল তাঁরা। যে সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড়েরাই। অবশেষে নিজেদের ভুল বুঝে সুর বদলেছে ’অল রেড’ রা।
সাময়িক ছুটি ব্যাপারটা কী? করোনাভাইরাসের কারণে খেলা বন্ধ, ক্লাবের আয়ও বন্ধ। এমন অবস্থায় ক্লাবের আর্থিক সংগতি ঠিক রাখতেই কর্মীদের সাময়িক ছুটিতে পাঠানো। তাতে কর্মীদের ক্ষতি হবে না, কারণ ব্রিটিশ সরকারের স্কিম অনুযায়ী এমন সাময়িক ছুটিতে যাওয়া কর্মীদের বেতনের ৮০ ভাগ (মাসে সর্বোচ্চ ২৫০০ পাউন্ড) সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। স্কিমটা করোনায় খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতেই করা হয়েছিল। লিভারপুল-টটেনহাম সেটির সুবিধাই নিয়েছে। কর্মীদের বাকি ২০ ভাগ বেতন ক্লাব দেবে। উদ্দেশ্য, এতে কর্মীদেরও বেতন ঠিক থাকল, ক্লাবের আর্থিক বিবৃতিতে চাপও অনেকটা কমল।
কিন্তু তাতে সরকারের কোষাগারে চাপ বাড়ে। অথচ লিভারপুলই গত ফেব্রুয়ারিতে দেখিয়েছে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে তাদের করপূর্ব আয় ৫১০ লাখ ডলার! যেখানে খেলোয়াড়দের কোটি কোটি টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে, সেখানে সাধারণ কর্মীদের ছুটিতে পাঠানো বিধিবহির্ভূত না হলেও অমানবিকই।
লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হেন্ডারসন কদিন ধরে প্রিমিয়ার লিগের অন্য ক্লাবের অধিনায়কদের সঙ্গে আলোচনা করে চলেছেন এমন কঠিন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে কাজ করার জন্য, এর মধ্যে ক্লাবের মালিকপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অবাক সাবেক খেলোয়াড়েরাই।
ক্লাবের কাজ দেখে লিভারপুলের সাবেক ডিফেন্ডার জেমি ক্যারাঘার টুইট করেছিলেন, ‘মহামারির শুরুর দিকে ক্লাবের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ সবার জন্য সমবেদনা দেখিয়েছেন, ক্লাবের সিনিয়র খেলোয়াড়েরা প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়দের বেতন কেটে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় ভালোভাবে জড়িত। সেই সম্মান, সুনাম সব জলে গেল! খুবই বাজে সিদ্ধান্ত, লিভারপুল।’ সাবেক মিডফিল্ডার ডিটমার হামান জানিয়েছিলেন, ‘ক্লাবটার যে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা আমি দেখেছি, তার সঙ্গে যায় না এটা।’
তুমুল সমালোচনার মুখে গতকাল সন্ধ্যায় লিভারপুল বিবৃতি দিয়ে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে। ক্লাবের হয়ে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান নির্বাহী পিটার মুর। সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘দীর্ঘ আলোচনার পর আমরা ভেবে দেখেছি, কর্মীদের বেতন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি, সেটা ভুল ছিল। তাই ব্রিটিশ সরকারের স্কিমের জন্য আমরা আবেদন করব না। যেভাবে কর্মীরা আমাদের কাছ থেকে বেতন পাচ্ছিলেন, সেভাবেই পেয়ে যাবেন। ক্লাবের কর্মীরা যেন ক্লাবের পক্ষ থেকে এই কঠিন সময়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পান, আমাদের লক্ষ্য সব সময় এটাই ছিল, এখনো তাই আছে। ব্রিটিশ সরকারের স্কিমের ওপর যেন আমাদের নির্ভর না করতে হয়, সে জন্য বিকল্প যে পথ অনুসরণ করা লাগবে, আমরা সেটাই করব।’
যাক, সুমতি হলো অবশেষে!