সীতাকুন্ডের বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংকরোডের দু‘ধারে সবুজ পাহাড়গুলোতে নিত্যনতুন বসতি স্থাপন করছে দখলদারচক্র। বর্ষামৌসুম ও চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রশাসনের নজরদারি কম থাকায় সবুজ পাহাড়গুলো কেটে সেখানে তৈরি করা হচ্ছে নিত্যনতুন বসতি। সীতাকুন্ড উপজেলা ও চট্টগ্রাম মহানগরের মাঝামাঝিতে বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংকরোডটির অবস্থান হওয়ায় পাহাড়খেকোদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতেও হিমশিম খাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর। স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কটির দু‘পাশের পাহাড়গুলোতে চলছে দখল-বেদখল আর পাকা-অর্ধপাকা বসতি নির্মাণ। কতেক পাহাড় কাটার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ব্যবস্থা নিলেও রাতের আঁধারে অসংখ্য পাহাড় কাটার ঘটনা বরাবরই আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। পাহাড় কেটে বসতি তৈরি করে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করছে প্রভাবশালী দখলদারচক্রটি। অবৈধ বসতি নির্মাণকারীদের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীচক্র। এসব পাহাড় কাটায় সহায়তা করছে ছিন্নমূলের সন্ত্রাসীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লাগোয়া সংযোগ সড়কটির দু‘ধারের পাহাড়গুলোতে নিত্যনতুন কোপ বসেছে। অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেও পাহাড়গুলো কাটা হচ্ছে নির্বিচারে। বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংকরোড সংলগ্ন নতুন তৈরি করা এ রাস্তা দিয়ে জঙ্গল সলিমপুর প্রবেশের মুখ লাগোয়া নুরনবী শাহ মাজারের পাহাড়টিতে চলছে নিত্য নতুন দখল ও স্থাপনা নির্মাণ সাথে যোগ হয়েছে আরেফিন এলাকাও। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখ এড়িয়ে পাহাড়ের উঁচু-নিচু সর্বত্র তৈরি করা টিনের ঘেঁড়ায় চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। আবার পাহাড় কেটে পূর্বের বসতিগুলোতে বাড়ানো হচ্ছে পরিধি। কাটা পাহাড়ে বসানো হয়েছে পানির ট্যাংক, নতুন করে বানানো হয়েছে সেমি পাকা বসতঘরও। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয় সূত্রে জানা যায় মাজারের পাশের পাহাড়ের ওই স্থানে বসতি তৈরি করায় আগে জরিমানা করা হয়েছিল। এখন নতুন করে কাটার অভিযোগ পেলে আমরা আবারো অভিযান চালাবো। পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান পরিবেশ অধিদপ্তর। অন্যদিকে বিগত বছরে লিংক রোডের অদূরে জালালাবাদ মাঝের ঘোনা এলাকায় জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করলেও সেখানে পুনরায় গড়ে উঠেছে নতুন বসতি। ফলে সেখানে প্রতিবর্ষায় ধীরে ধীরে ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়টি। স্থানীয় বেশ কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা যায় সেখানে পাহাড়ে যারা বসতি বানিয়ে বসবাস করছেন তারা আসলে নিতান্ত খেটে খাওয়া হতদরিদ্র মানুষ। এখানে বড় বড় প্রভাবশালীরা বেশিরভাগ পাহাড় দখল করে প্লট বানিয়ে নন জুড়িশিয়াল স্ট্যাম্পের মাধ্যমে মানুষের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। যারা কিনছেন তারাই এখন মহাবিপদে। বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন ম্যানেজ করে সেখানে বিদ্যুতের সংযোগও নেওয়া হচ্ছে। আবার অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে টিনশেড ঘর তৈরি করে ভাড়াও দিচ্ছেন। বর্ষাকালে পাহাড় ধসের শঙ্কায় জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে উচ্ছেদ করা হলেও পুনরায় গড়ে উঠে নিত্য নতুন টিনশেড ও অধাপাকা ঘর। প্রতিনিয়ত বাড়ছে অবৈধ বসতির সংখ্যা। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায় বায়েজিদ-ফৌজদারহাট লিংক রোডটির কিছু অংশ মহানগর অঞ্চলের এবং কিছু অংশ জেলা সীমানার। এতে কোন পাহাড়ের কোথায় অবস্থান সেটা চিহ্নিত করে, পাহাড় কাটার সাথে জড়িত চক্রটির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’