সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ছাত্রজনতার দখলে রাজপথ, শ্রীমঙ্গলে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ কবিরহাটে জমি সংক্রান্ত বিরোধে সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৩ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসে আবারো হামলার শিকার টাকা না দেওয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেফতার কেশবপুরের টিটাবাজিতপুরে জমি জবরদখলকারী ও চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অসুস্থ মাহমুদুর রহমান মান্না বিএসএমএমইউতে ভর্তি “বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলে রুখে দেয়ার আহ্বান” নাজিরপুরে উপজেলা প্রকৌশলীর দুর্ণীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে হবে: আবদুল হালিম জলঢাকায় ভোট চোর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ব্যস্ত সময় পার করছেন দুর্গাপুরের মৃৎশিল্পিরা

মিল্কভিটার উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১

দেশের দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি ও কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্য ১৯৭৩ সালে গড়ে তোলা হয় বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড (মিল্কভিটা)। খামারিদের দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা সমবায় প্রতিষ্ঠানটিকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন উদ্যোগ নিয়ে চলেছে সরকার। বাড়ানো হয়েছে এর উৎপাদন সক্ষমতাও। তবে তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না দেশের দরিদ্র খামারিদের। প্রতিনিয়তই দুগ্ধ সংগ্রহ কমছে মিল্কভিটার। সরকারের সব সহযোগিতার পরও খুব একটা এগোতে পারছে না মিল্কভিটা।
এ অঞ্চলের দরিদ্র খামারি-কৃষকরা বরাবরই বঞ্চিত। স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত বছরের পর বছর ধরে তাদের প্রাপ্য মুনাফায় ভাগ বসিয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া-দালালরা। এ মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি কৃষকদের সমবায়ের মাধ্যমে সুসংগঠিত করা, দুধের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও বাজার নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য থেকে গড়ে তোলা হয়েছিল মিল্কভিটা। অন্যদিকে খাঁটি ও স্বাস্থ্যসম্মত দুধের নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে শহরাঞ্চলের ভোক্তাদেরও উপকৃত করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশকে দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা নিয়েও বড় আশা জাগিয়েছিল মিল্কভিটা। প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে সরকারি উদ্যোগ ও আন্তরিকতারও ঘাটতি নেই। প্রতিষ্ঠানটিকে স্বাবলম্বী করতে নানা উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। তার পরও এগোতে পারছে না সংবিধিবদ্ধ এ জাতীয় সমবায় প্রতিষ্ঠানটি। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি দুগ্ধ সংগ্রহ বাড়াতে পারছে না। এতে প্রান্তিক খামারিদের কাছে প্রতিষ্ঠানটির সুফলও পৌঁছাচ্ছে এখন আগের চেয়ে অনেক কম।
মিল্কভিটার তথ্য বলছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর থেকেই ক্রমাগতভাবে দুধ সংগ্রহ কমছে প্রতিষ্ঠানটির। এর মধ্যে শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছরে একেবারেই যৎসামান্য পরিমাণে দুধ সংগ্রহ বেড়েছিল প্রতিষ্ঠানটির। ২০২০-২১ অর্থবছরে মিল্কভিটা খামারি ও কৃষকদের কাছ থেকে মোট দুগ্ধ সংগ্রহ করেছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৫৪ হাজার লিটার। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ২৯ লাখ ৩৯ হাজার লিটার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা ছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ ৩৩ হাজার লিটার। মিল্কভিটা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুধ সংগ্রহ করেছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ ৩২ হাজার লিটার। এর আগে সর্বশেষ বেড়েছিল ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। ওই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি দুধ সংগ্রহ করতে পেরেছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৩৮ হাজার লিটার।
আবার মিল্কভিটার সংগৃহীত দুগ্ধের গড় মূল্যবৃদ্ধির হারও বেশ কম। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে যেখানে প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত দুধের গড় দাম ছিল লিটারপ্রতি ৪০ টাকা ৮৪ পয়সা। সেখানে ২০২০-২১ অর্থবছরে গড় দাম এসে দাঁড়িয়েছে লিটারপ্রতি ৪১ টাকা ৫৩ পয়সা। সে হিসেবে ছয় বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির সরবরাহকৃত দুধের গড় দাম বেড়েছে মাত্র ৬৯ পয়সা। যদিও বাজারের প্রতিযোগী বেসরকারি খাতের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত দুধের দাম এ সময় উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেড়েছে। সংগ্রহ কমার পাশাপাশি মূল্যে পিছিয়ে থাকায় দেশের খামারি-কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে এখন আর আগের মতো ভূমিকা রাখতে পারছে না মিল্কভিটা।
যদিও প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে একের পর এক প্রকল্প হাতে নিয়ে চলেছে সরকার। মিল্কভিটায় এখন ৪৯৮ কোটি টাকার তিনটি প্রকল্পকাজ চলমান রয়েছে। গ্রহণ ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে আরো ২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প। তবে সেসবের সুফল প্রান্তিক পর্যায়ের দুধ উৎপাদকদের কাছে পৌঁছবে কিনা, সে বিষয়ে সন্দিহান অনেকেই।
যদিও এসব প্রকল্পের সুফল প্রান্তিক কৃষক-খামারিদের কাছে পৌঁছবেই বলে আশাবাদী মিল্কভিটার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপু। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বাজারে এ খাতে প্রতিযোগী অনেক বেড়েছে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে মিল্কভিটা পেরে উঠছে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে গোখাদ্যের দামও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আমরা উৎপাদকদের দুধের ভালো দাম দিতে পারি না। ফলে দুধ সংগ্রহের পরিমাণ প্রতি বছরই কমছে। তবে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। এজন্য আমরা দুধের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। আমরা এ খাতের খামারিদের জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছি। নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করছি। তার সুফল সাধারণ দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা পাবেন বলেই আশা করছি। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রক্রিয়াজাত ডেইরি শিল্পে ১৫ প্রতিষ্ঠানের দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। এ খাতে এক দশক আগেও কোম্পানি ছিল হাতে গোনা কয়েকটি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিনিয়োগে এসেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে ১৫টির বেশি পাস্তুরিত তরল দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিএসটিআইয়ের মান সনদ নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো দুধ উৎপাদন করছে। দেশে দুধের বাজারে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে মিল্কভিটা ছাড়াও রয়েছে প্রাণ ডেইরির প্রাণ মিল্ক, ব্র্যাক ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রজেক্টের আড়ং ডেইরি, আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফার্ম ফ্রেশ মিল্ক, রংপুর ডেইরির আরডি, আফতাব মিল্ক অ্যান্ড মিল্ক প্রডাক্টসের আফতাব, ইগলু ডেইরির ইগলু, ড্যানিশ ডেইরি ফার্মের আইরান, ইছামতি ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টসের পিউরা, আমেরিকান ডেইরির মুউ, উত্তরবঙ্গ ডেইরির মিল্ক ফ্রেশ ও ওয়ান মিল্ক, পূর্ব বাংলা ডেইরি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের আকরান, শিলাইদহ ডেইরির আল্ট্রা, তানিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রডাক্টসের সেইফ, জিহান মিল্ক অ্যান্ড ফুড প্রসেসিংয়ের জিহান ইত্যাদি। স্বাধীনতার অব্যবহিতপরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের ‘আমূল’ পদ্ধতি অনুসরণ করে দুগ্ধ শিল্প গড়ে তোলার নির্দেশনা দেন। তার এ নির্দেশনার উদ্দেশ্য ছিল কৃষকের উৎপাদিত দুধের ন্যায্যমূল্য ও শহুরে ভোক্তাশ্রেণীর জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত দুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা। এর ভিত্তিতে ১৯৭৩ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) ও ডেনমার্কের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সি ড্যানিডার সহযোগিতায় দেশে দুগ্ধ শিল্প নিয়ে সমীক্ষা করানো হয়। সমীক্ষার সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিয়ে ১৯৭৩ সালে ‘সমবায় দুগ্ধ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয় তৎকালীন সরকার।
কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও দুগ্ধ শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করতে দেশের পাঁচটি যুক্ত এলাকায় স্থাপন করা হয় কারখানা। যাত্রা করে মিল্কভিটা।
বর্তমানে দেশের সব বিভাগেই মিল্কভিটার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক কর্মরত ১ হাজার ১০০ জন। সারা দেশে মিল্কভিটায় নিবন্ধিত প্রাথমিক সমিতি রয়েছে ৩ হাজার ৪৭৪টি। কেন্দ্রীয় সমিতির সংখ্যা ৮১। এসব সমিতিতে মোট সদস্য হিসেবে রয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৬৮ জন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com