সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ছাত্রজনতার দখলে রাজপথ, শ্রীমঙ্গলে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ কবিরহাটে জমি সংক্রান্ত বিরোধে সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৩ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসে আবারো হামলার শিকার টাকা না দেওয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেফতার কেশবপুরের টিটাবাজিতপুরে জমি জবরদখলকারী ও চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অসুস্থ মাহমুদুর রহমান মান্না বিএসএমএমইউতে ভর্তি “বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলে রুখে দেয়ার আহ্বান” নাজিরপুরে উপজেলা প্রকৌশলীর দুর্ণীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে হবে: আবদুল হালিম জলঢাকায় ভোট চোর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ব্যস্ত সময় পার করছেন দুর্গাপুরের মৃৎশিল্পিরা

অপচয় ও আভিজাত্য

আবু আইমান:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৫ নভেম্বর, ২০২১

আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এই উম্মতকে মধ্যমপন্থী উম্মত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ‘এমনিভাবে আমি তোমাদের মধ্যপন্থী স¤প্রদায় করেছি’ (সূরা বাকারা, আয়াত-১৪৩)। এই উম্মত জীবনের সর্বক্ষেত্রে মধ্যমপন্থী। আমরা ভুলে গেছি মধ্যমপন্থা কী। ফলে অপচয় এখন আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। মধ্যমপন্থা হলো ইসলামী শরিয়তের একটি অন্যতম পরিভাষা, এটি হলো ইসলামের দৃষ্টিতে সৎ ভারসাম্যপূর্ণ জীবন পদ্ধতি, যা চরমপন্থাকে এড়িয়ে চলে ও বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যমপন্থী অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা করে।
জীবনের সব ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন মানুষকে গতিশীল করে, কাজকে সহজ করে, সমাজকে উন্নত করে, ব্যক্তি জীবন ও পারিবারিক জীবন সর্বক্ষেত্রে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে। মধ্যমপন্থার বহুদিক রয়েছে। যেমন আয়-ব্যয়ের মধ্যমপন্থাকে বলা হয় মিতব্যয়িতা।
পবিত্র কুরআনে সূরা ফুরকানের ৬৭ নম্বর আয়াতে মিতব্যয়িতার উল্লেখ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না। বরং মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে।’ মিতব্যয়িতা নিয়ে কুরআন একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান প্রকাশ করেছে।
ছাত্রজীবনে আমরা অনেক ভাব-স¤প্রসারণ লিখেছি। এর একটি ছিলÑ ‘যে জন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি আশুগৃহে তার জ্বলিবে না আর নিশীথে প্রদীপ বাতি।’ এর মানে হলোÑ কোনো ব্যক্তি যদি সুসময়ে অর্থের অপচয় করে, তাকে দুঃসময়ে পস্তাতে হয়। তার জীবনে অভাব নেমে আসে। চলার সাধারণ ছন্দ হারিয়ে সে ভয়ঙ্কর দরিদ্র্যতার শিকার হয়। জীবনে যখন তার দুর্গতি নেমে আসবে তখন হয়তো সে তার কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করবে কিন্তু এতে তার কোনো লাভ হবে না। অপচয় এমনই এক ভয়াবহ ব্যাধি। একজন মানুষের জীবনে অপচয়ের বহুমুখী প্রভাব কতটা ভয়াবহ তা কেউ বুঝলে অপচয়কে কখনো ফ্যাশন বা আভিজাত্য ভাবত না। আসুন দেখি আমাদের জীবনে এই তথাকথিত আভিজাত্য কত ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।
অপচয়কারী আল্লাহর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত: পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে, সূরা আন আমের ১৪১ নং আয়াতে ‘নিশ্চয়ই তিনি অপব্যয়কারীদের পছন্দ করেন না’। অথচ আমাদের ইহকাল ও পরকালীন জীবনে আল্লাহ তায়ালার ভালোবাসা অত্যাবশ্যক। অপচয় মানুষকে হারাম উপার্জনের দিকে ধাবিত করে। কারণ অপচয়ের কারণে মানুষ তার উপার্জনের সাথে খরচের কোনোভাবেই সামঞ্জস্যতা রক্ষা করতে পারে না। নিয়মিত হালাল উপার্জন দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারে না। তখনই কৃত্রিম ও অতিরিক্ত চাহিদা তাকে হারামের দিকে টেনে নিয়ে যায়। যা অপচয়ের কারণেই মূলত তৈরি হয়েছে।
অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ রোগব্যাধির কারণ: চিকিৎসা বিজ্ঞানের কল্যাণে আজ আমরা জানি যে, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে দেহ ভারী হয়ে পড়ে। শিশুরা শারীরিক পরিশ্রম ও খেলাধুলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বড়দেরও কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ৮০ শতাংশ রোগব্যাধি খাবারের কারণেই হয়ে থাকে। অপরিমিত খাবারই মানুষকে দিন দিন মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। এই বিষয়টি হুবহু সমর্থন করে কুরআনের চমৎকার এমন একটি আয়াত রয়েছে। ‘তোমরা আহার ও পান করো, আর অপচয় করো না’ (সূরা আরাফ, আয়াত-৩২)।
আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্যসংক্রান্ত মূলনীতি বর্ণনা করে দিয়েছেন। আমাদেরকে ততটুকু খাবার গ্রহণ করতে বলেছেন, যতটুকু গ্রহণ করলে অপচয় হবে নাÑ এই নির্দেশনা মেনে চললে অলসতা আর বেশির ভাগ রোগব্যাধি থেকেও মুক্ত থাকব।
অপচয়কারীর জীবনে শয়তান ভাগ বসায়: যেমন জাবির রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূলুল্লাহ সা: তাকে বলেছেন, ‘এক বিছানা পুরুষের জন্য, অপরটি তার স্ত্রীর জন্য এবং তৃতীয় বিছানা মেহমানের জন্য। আর চতুর্থখানা শয়তানের জন্য’ (মুসলিম)। অর্থাৎ প্রয়োজন ছাড়া বাসায় যদি একটি বাড়তি বিছানাও থাকে। তাহলে সেখানে শয়তান আরাম করার সুযোগ পায়।
অর্থনৈতিক প্রবল সঙ্কট জীবনের ছায়ার মতো লেগে থাকে। যখন টাকা থাকে তখন আমরা কোনো প্ল্যান ছাড়াই খরচ করি। একটা সময় এমন হয় যে, খুব প্রয়োজনের সময় আমার পকেটে টাকা থাকে না। অনেক সময় গাড়ি ভাড়ার জন্য পাঁচটি টাকা কারো কাছ থেকে হেল্প নিতে হয়। তার উল্টোটা হতে পারে আমার পরিবার আত্মীয়স্বজন যারা একসময় আমার প্রচ-রকম বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল। আমি তাদের বিপদেও এগিয়ে যেতে পারি না। কারণ আমি তো অপচয় করে সব খরচ করে বসে আছি। যার ফলে সমস্যাটা লেগেই থাকে যা আমাকে কখনোই ছেড়ে যায় না। রাসূলে কারিম সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না’ (মুসনাদে আহমাদ-৭/৩০৩)। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যারা অপব্যয় করে, তারা তো শয়তানের ভাই। আর শয়তান তার রবের প্রতি অতি অকৃতজ্ঞ’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৭)।
জীবনের এমন একটা পর্যায়ে আসে যখন উপার্জনের সুযোগ থাকে না। শেষ বয়সে এসে পরিবার-পরিজনের জন্য রেখে যাওয়ার মতো কোনো কিছুই আমাদের কাছে থাকে না। তাদের জন্য আমরা কিছুই রেখে যেতে পারি না। যার ফলে এর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের সন্তানরা বোধ করতে থাকে। অভিভাবক হিসেবে নিজের মাঝে যেমন স্থায়ী গ্লানিবোধ তৈরি হয়, ঠিক তেমনি সন্তানদের মনেও আমাদের প্রতি অভিমান আর অভিযোগের পাহাড় তৈরি হয়।
রাসূলে কারিম সা: বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাওয়া উত্তম’ (বুখারি-১/৪৩৫, মুসলিম-৩/১২৫১)। তাই আমাদের এ খরচের হাত খাটো করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী খরচ করে স্বনির্ভর হতে হবে।
হজরত ইবনে মাসউদ রা: রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘(হাশরের দিন) মানুষের পা একবিন্দু নড়তে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে এই পাঁচটি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা না হবে। ১. নিজের জীবনকাল সে কোন কাজে অতিবাহিত করেছে? ২. যৌবনের শক্তি সামর্থ্য কোথায় ব্যয় করেছে? ৩. ধন সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে?; ৪. অর্জিত ধনসম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে? এবং ৫. (দ্বীনের) যতটুকু ইলম অর্জন করেছে সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে’ (জামে তিরমিজি)?
প্রশ্নগুলো খেয়াল করে আবার পড়ুন। যৌবন নিয়ে একটি প্রশ্ন হবে। ইলম নিয়েও একটি প্রশ্ন হবে। হায়াত নিয়েও একটি প্রশ্ন হবে। কিন্তু উপার্জন নিয়ে প্রশ্ন হবে দুটিÑ আয় ও ব্যয়। কত ভয়াবহ ব্যাপার। অপচয় আল্লাহর আদালতে এভাবেই আমাকে আসামি করে তুলবে।
মিতব্যয়িতা আর কার্পণ্যতার মাঝে পার্থক্য কী? মিতব্যায়ী হলোÑ যে নিজের প্রয়োজন মতো খরচ করে কিন্তু অপ্রয়োজনে নষ্ট করে না। আর কার্পণ্য হলো প্রয়োজন সত্ত্বে¡ও খরচ না করা। পবিত্র কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না, আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৯)।
দুনিয়া ও আখিরাতের প্রতিটি মুহূর্ত সুখী ও সমৃদ্ধ চাইলে মিতব্যয়ী হওয়ার বিকল্প নেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দিন, আমীন। লেখক: খতিব, আল্লামা জালালুদ্দিন রুমি (রহ:) জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com