চালের বাজারে এখনও অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহে চিকন চাল ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৭৩ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৬২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া সরু চাল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৩ টাকা কেজি দরে। আর ৫৬ টাকা কেজি দরের মাঝারি সাইজের চাল এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকা কেজি দরে। টিসিবির হিসেবে, গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশের বেশি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে ব্রি-২৮ চালের কেজি ৬০ টাকা, মিনিকেট ৭০-৭৫ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫৫ টাকা, স্বর্ণ ৫০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মোটা মসুর ডালের কেজি ১১০ টাকা, চিকন মসুর ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। এছাড়া পেঁয়াজের কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে খোলা আটা (সাদা) বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে এই একই আটার দাম ছিল ৫২ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে ৩ টাকার মতো। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে এই আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ শতাংশের বেশি। এছাড়া ময়দার (প্যাকেট) দাম কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে এই প্যাকেট ময়দার দাম ছিল ৬৩ টাকা কেজি।
চলতি সপ্তাহে গত সপ্তাহের তুলনায় নতুন করে বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে দেশি আদা ও রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে রসুনের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকার মতো। গত সপ্তাহের ৮০ টাকা কেজি দরের দেশি রসুন এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে। আর গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া দেশি আদা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২১৫ টাকা কেজি দরে।
ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি আদার পাশাপাশি আমদানি করা আদার দামও বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকার মতো। তারা গত সপ্তাহে দেড়শ’ টাকা কেজি দরে আমদানি করা আদা বিক্রি করলেও চলতি সপ্তাহে প্রতি কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকা দরে। এদিকে ব্যবসায়ীরা আমদানি করা হলুদ বিক্রি করছেন গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৪০ টাকা বেশি দরে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে আমদানি করা হলুদের দাম ছিল ২০০ টাকা কেজি, চলতি সপ্তাহে সেই একই হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে।
এ প্রসঙ্গে কাওরানবাজার এলাকার ব্যবসায়ী সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি করা আদা, হলুদ ও রসুন আগের তুলনায় একটু কম আসছে। এ কারণে এই পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে।’
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা ডিম হালিতে বেড়েছে ৩ টাকার বেশি। আর প্রতি ডজনে বেড়েছে প্রায় ১২ টাকার মতো। গত সপ্তাহে ৪৭ টাকা হালি ফার্মের মুরগির ডিম এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি। বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৩৫ টাকা। এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মানিক নগর এলাকার মুদি দোকানি ইউসুফ মৃধা বলেন, ‘মোকামে ডিমের দাম বেড়েছে। এ কারণে আমরাও বেশি দামে ডিম বিক্রি করছি।’
ব্রয়লার মুরগির কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। এছাড়া লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা এবং সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০ টাকা, আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা দরে।
বাজারে ৬০ টাকা কেজির নিচে পেঁপে আর কাচকলা ছাড়া কোনও সবজিই মিলছে না। যদিও বাজারে সবজির সরবরাহ রয়েছে পর্যাপ্ত। বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, কাকরোল ৭০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, গোল বেগুন ৮০ টাকা, আর চিকন বেগুন ৭০ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা। প্রতি আঁটি লাল শাক ২৫ টাকা, ডাটা শাক ২৫ টাকা, পুঁই শাক বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৬০-৭০ টাকা, জালি কুমড়া প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শাক-সবজির মতো মাছের দামও বাড়তি বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০ টাকা, রুই ২৫০ টাকা, পাঙাশ ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৪০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৫০০-৭৫০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর গোপীবাগ বাজারে আসা রুহুল আমিন বলেন, ‘বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি, এ কারণে বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছি।’