ভারতের বেঙ্গালুরু শহরের রামেশ্বরম ক্যাফেতে আইইডি বিস্ফোরণে জড়িত দুই অভিযুক্ত অবশেষে ধরা পড়লো এনআইএ- এর জালে। অভিযুক্ত দুই জন দিঘায় লুকিয়ে ছিল। ১লা মার্চ বেঙ্গালুরুর রামেশ্বর ক্যাফেতে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণে আহত হন কমপক্ষে ১০ জন। বিস্ফোরণে আইডি জাতীয় বিস্ফোরক ব্যবহার হয়। একটি ব্যাগের মধ্যে রাখা বিস্ফোরক থেকে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজনকে ধরতে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে বলে ঘোষণা করে এনআইএ। তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এক যুবক কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে এসেছিল। মুখে মাস্ক পরা ছিল। ওই যুবক ইডলি অর্ডার করে। খাবার খেয়ে সে বেরিয়ে যায়। টেবিলের নীচে রেখে যায় ব্যাগটি। মিনিট দশেক পরই ক্যাফেতে বিস্ফোরণ হয়। ঝলসে যান অনেকে। ওই হামলায় মূল অভিযুক্ত ছিল আব্দুল মাথিন ত্বহা ও মুসাভির হুসেন সাজিব। বিস্ফোরণের পর থেকেই সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছিল। অবশেষে তাদের আজ গ্রেপ্তার করে এনআইএ।
মুজাম্মিল শরিফ নামে আগেই একজনকে গ্রেপ্তার করে তাকে মূলচক্রী বলে দাবি করেছিল এনআইএ । জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে এবার গ্রেপ্তার হলো আরও দুই সন্দেহভাজন জঙ্গি। ২ অভিযুক্ত প্রথমে আত্মগোপন করেছিলেন কলকাতায়। কলকাতার লেনিন সরণিতে ‘হোটেল প্যারাডাইস’ নামে একটি হোটেলে এক রাত থাকে তারা। এমনকি বন্দর এলাকাতেও গা ঢাকা দিয়েছিল ধৃত আবদুল মাতিন তাহা ও মুসাভির হুসেন সাজিব। তারপর দিঘায় যায় তারা। সেন্ট্রাল আইবি থেকে ইনপুট এসে পৌঁছয় জেলা পুলিশের কাছে। তারপরই রাজ্য পুলিশ ও এনআইএ যৌথ অভিযানে জালে ধরা পড়ে অভিযুক্তরা। সহযোগিতা করে কর্নাটক, কেরালা ও তেলেঙ্গানা পুলিশও। অভিযুক্ত ২ জনকে গ্রেপ্তারির পাশাপাশি উদ্ধার হয়েছে একটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ সহ বেশ কিছু ইলেকট্রনিক ডিভাইসও।
এনআইএ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত দুইজনের বিরুদ্ধেই ২০২০ সালে সন্ত্রাসের মামলা রয়েছে। আইসিসের বেঙ্গালুরু মডেল- আল হিন্দের সঙ্গে যুক্ত আব্দুল মাথিন ত্বহা। গোয়েন্দারা ইতিমধ্যেই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন যে দক্ষিণ ভারতে বিস্ফোরণের পর সূদূর পশ্চিমবঙ্গে কেন তারা ঘাঁটি গাড়ল। এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ভাড়াই বা পেল কীভাবে। ধৃত দুই জঙ্গির সঙ্গে এখানকার কারোর যোগাযোগ রয়েছে কিনা, পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের স্লিপার সেল সক্রিয় রয়েছে কি না, এই বিষয়গুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
২ অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হবার পরই শুরু হয়ে গেছে কাদা ছোড়াছুড়ি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্রেডিট দিয়েছেন রাজ্য পুলিশের সক্রিয়তাকেই। তিনি বলেন – ‘লোকগুলোও কর্ণাটকের, আমাদের এখানের নয়। দু’ঘণ্টা পশ্চিমবঙ্গে লুকিয়ে ছিল দু’ঘণ্টার মধ্যে আমরা ধরে দিয়েছি… আমাদের পুলিশ।’
এদিকে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য, রাজ্যের শাসক দলের উদ্দেশে বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সন্ত্রাসবাদীদের নিশ্চিন্ত আশ্রয় হয়ে উঠেছে’। সিপিআইএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “খুব ভাল খবর। এজেন্সির জন্য এটা যেমন কৃতিত্বের, তেমনই পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের জন্য লজ্জার। এখানকার পুলিশ প্রশাসন কাজ করে না। তাদের মৌলিক দায়িত্ব মমতা ও তার পরিবারকে রক্ষা করা। এই জন্য পশ্চিমবঙ্গকে অপরাধীরা স্বর্গস্থান বলে মনে করে।’