শীতকাল না আসতেই শীতের আবহাওয়া ইতোমধ্যে বাংলায় প্রবেশ করেছে। আর শীতের সকালে মাটির চুলায় মায়ের হাতে বানানো ভাপা পিঠা খেয়ে মুখ রঙিন করার এমন মধুর স্মৃতি কারই বা নেই! গ্রাাম বাংলার রস্তায়, মোড় অথবা বাজারের কোন এক অলিগলিতে এখন শুধু পিঠার ঘ্রাণ! শীতের ভাঁপা ও চিতই পিঠা একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। শীতের পরিচিত এই পিঠা গুলো বানানোর দৃশ্য আগের মতো ঘরে ঘরে খুবই কম দেখা যায়। সে কারণে ঘরের বাইরের দোকানের পিঠাই একমাত্র ভরসা। আর সে প্রয়োজন থেকেই শীত না আসতেই শেরপুরের নকলা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রাস্তার মোড়ে-মোড়ে গড়ে উঠেছে খোলা আকাশের নিচে বা ভ্যান গাড়ির উপরে পিঠার দোকান। সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে ভাপা পিঠার গরম আর সুগন্ধি ধোঁয়ায় মন আনচান করে ওঠে। সরষে বা ধনে পাতা বাটা অথবা শুঁটকির ভর্তা মাখিয়ে চিতই পিঠা মুখে দিলে ঝালে কান গরম হয়ে শীত পালায়। পিঠা প্রেমি মানুষ পিঠার স্বাদ গ্রহণ করতে ফুটপাতের এসব পিঠার দোকানে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ভিড় করছেন। আবার অনেককেই দেখা যাচ্ছে পিঠার দোকানের চুলার পাশে বসেই গরম পিঠা খাওয়াকে রেওয়াজে পরিণত করেছেন। অনেকে পরিবারের চাহিদা মেটাতে পিঠা ক্রয় করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। তবে শ্রমজীবী, রিক্সা-ভ্যান চালক, ড্রাইভার, বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকসহ অভিজাত শ্রেণীর লোকজনের কাছে অত্যন্ত প্রিয় খাবার শিতের পিঠা। এই শীতে ফুটপাতের পিঠাওয়ালা ভদ্রঘরের অভিজাত গৃহবধূদের মুক্তি দিয়েছে পিঠা তৈরির কষ্ট থেকে। এসব পিঠার দোকান বসছে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা এবং বিকাল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এ সমসস্ত ভাসমান পিঠার দোকানের অধিকাংশ মালিকরাই হলো হতদরিদ্র পরিবারের। স্বচ্ছছলতা ফেরাতে সংসারে অর্থের যোগান দিতে তারা রাস্তার পাশে চিতই পিঠা ও ভাঁপা পিঠা তৈরি করে বিক্রি করছে। নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা বাজারের পিঠা বিক্রেতা জুলহাস মিয়া জানান, শীত আসলেই আমি প্রতিবার পিঠা বিক্রি করি। আমি ১৭ বছর আগে থেকে পিঠা বিক্রি করছি। পিঠা বিক্রি করা এখন আমাদের নেশা হয়ে গেছে। চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরী করি ভাঁপা পিঠা। আর মিষ্টি করার জন্য দেয়া হয় গুড়। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নারকেলের শাঁস দেয়া হয়। প্রতিদিন ২০০থেকে ২৩০ টি পিঠা আমি বিক্রি করি। চিতই পিঠার সাথে সরিষার ভর্তা, শুটকি ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা দেই। আর প্রতিটি পিঠার দাম মাত্র ৫ টাকা করে রাখি। সে হিসেবে প্রতিদিন ১০০০ টাকা থেকে ১১৫০ টাকার পিঠা বিক্রি করি। আর চাল, গুড়, নারিকেল, ভর্তা ও আনুষাঙ্গিক খরচ সব মিলিয়ে প্রায় আনুমানিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মতো হয়। তিনি আরো বলেন, পিঠা বিক্রি করে তার সংসারের খরচ যোগান দিতে হয়। পিঠা ক্রেতা নুর হোসাইনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি ফুটপাতের এসব দোকানে বিভিন্ন রকমের পিঠা পেয়ে খুব খুশি। এসব পিঠা তারা নিজেরাও খান ও পরিবারের লোকজনদের জন্য নিয়ে যান। বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা খেতে আসা তাসনিম মিডিয়ার পরিচালক তাহের উদ্দীন গাজি জানান, এই শীতের সন্ধ্যায় চিতই পিঠার সাথে সরিষার ভর্তা, শুটকি ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা জিভে জল আসার মত স্বাদের কারণেই আমরা প্রতিদিন আসি পিঠা খেতে। স্থানীয় সচেতন মহল মনেকরছেন পিঠা ব্যবসায়িরা বেকারত্ব দুরীকরণ ও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি তারা লালন করছেন দেশীয় এ সংস্কৃতি।